শামীম হকের বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন
ফরিদপুর–৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলে দাবি করলেও এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তিনি নাগরিকত্ব ত্যাগের সপক্ষে যেসব নথি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছেন, সেখানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অযোগ্য। শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক, এমন অভিযোগ এনে তাঁর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ)। গতকাল বুধবার আপিলের আংশিক শুনানি হয়। আগামীকাল শুক্রবার এ অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার আপিল শুনানিতে শামীম হকের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা দাবি করেন, শামীম হক বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। তবে ইসির প্রশ্নের মুখে তাঁর নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে, এমন কোনো সনদ দেখাতে পারেননি। তাঁরা কিছু কাগজপত্র ইসিতে জমা দেন। সেখানে বলা হয়, শামীম হক গত ৯ নভেম্বর নাগরিকত্ব ত্যাগের জন্য আবেদন করেছেন।
শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা–সংক্রান্ত যেসব নথি ইসিতে জমা দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেছেন, যে নথিগুলো শামীম হক জমা দিয়েছেন, তার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাঁর নাগরিকত্বের অবস্থা জানতে আপিল মুলতবি করে ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগের ঘোষণা দিতে হলে সে দেশের কাউন্সেলরের কার্যালয় বা বাংলাদেশে অবস্থিত নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। শামীম হক এই দুই জায়গার কোথায় আবেদন করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ৯ নভেম্বর তারিখে শামীম হকের সই করা একটি ঘোষণা ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কোথায়, কীভাবে এটি জমা দিয়েছেন, তার কোনো উল্লেখ নেই। এটি নেদারল্যান্ডসের কাউন্সেলর কার্যালয় বা ঢাকায় তাদের দূতাবাস গ্রহণ (রিসিভ) করেছে, এমন কোনো সইও নেই।
পাশাপাশি শামীম হকের পক্ষে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের নামে একটি ই–মেইলের কপি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ‘হল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে’ আবেদন করেছেন। সেখানে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী কোনো নির্দেশনা পেলে তাঁরা সেটা জানাবেন।
এ চিঠির বিষয়ে এ কে আজাদের পক্ষে বলা হয়েছে, ওই ই–মেইলে দেশটির নাম ‘হল্যান্ড’ ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে দেশটির বর্তমান নাম হলো নেদারল্যন্ডস। ফলে আসলেই এই চিঠি বা ই–মেইল নেদারল্যান্ডসের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এসেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব কাজ কাগজে হবে, এখানে আমার বলার কিছু নেই। নমিনেশন পেপার সাবমিট করার আগে আমি নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের জন্য ডাচ এমবাসিতে আবেদন করেছি। এখানে লুকোচুরির কোনো বিষয় নেই। আগামীকাল বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনেই এর সমাধান হবে। এ নিয়ে এত প্রশ্নের কিছু দেখছি না।’
অন্যদিকে এ কে আজাদের বিরুদ্ধেও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগে আপিল করেছেন শামীম হক। সেটির শুনানি এখনো হয়নি। ইসি সূত্র জানায়, এই দুজনসহ যাঁদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে আপিল হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল ইসি। ঢাকায় অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ করে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিকে জানাতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে এ কে আজাদ এবং বরিশাল–৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছিল। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ দুজনের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।