জনদুর্ভোগ হয়, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পর এই মুহূর্তে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ও আদালতের আদেশের পর তিনি প্রথম আলোকে এ কথা বলেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত শুধু স্ট্যাটাসকো (স্থিতাবস্থা) আদেশ দেননি। শুধু স্ট্যাটাসকো আদেশ দিলে কোটা বিষয়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে উচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, সেই আদেশ বলবৎ থাকত। খেয়াল করতে হবে, সর্বোচ্চ আদালত সাবজেক্ট মেটারের ওপর স্থিতাবস্থা আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ, কোটা বিষয়ে সরকারের জারি করা পরিপত্র এখন আবার বলবৎ হলো। ফলে এই মুহূর্তে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়, এই ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেওয়া হলো উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেছেন, আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী দিন রাখা হলো।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ যেমন আছে, তেমন থাকবে। কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যেসব সার্কুলার দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এখন কোটা থাকছে না।
তবে আদালতের আদেশের পরও শিক্ষার্থীরা অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। আপিল বিভাগের আজকের আদেশের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের সঙ্গে আমাদের আজকের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মূলত নির্বাহী বিভাগের কাছেই কোটা-সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চাইছি। এক দফা দাবি। এটি আদালতের এখতিয়ার নয়। এটি একমাত্র নির্বাহী বিভাগই পূরণ করতে পারবে। সরকারের কাছ থেকেই আমরা সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি।’
শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচিতে থাকা এই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই আদেশের মাধ্যমে সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করা হয়েছে। আমরা আশাহত হয়েছি। কিন্তু দমে যাইনি। নির্বাহী বিভাগ থেকে কমিশন গঠন করে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধান না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সোহাগ মিয়া দুপুরে বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে আশপাশের পয়েন্টগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে আসবেন। পরে তাঁরা সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি জানাবেন।