বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরোক্ষভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে: মির্জা আব্বাস
বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে পরোক্ষভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘খালাস নয়, সাময়িক সময়ের জন্য জামিন পেয়েছি। আমরা এখন খাঁচায় পোষা মুরগির মতো। যখন দরকার, ধরে নিয়ে জবাই করে দেবে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা বন্দী আছি। আমরা এখনো স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারি না।’
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তাঁর বক্তব্যের খণ্ডিত কিছু অংশ বিকৃতভাবে ‘দু-তিনটি সরকার-সমর্থিত’ পত্রিকা তুলে ধরেছে। দলের ও দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে এবং তা দূর করার জন্য তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য ছিল যে আওয়ামী লীগ জনগণের কোনো দাবিই মেনে নেয়নি। ফলে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। এই বক্তব্যকে টুইস্ট করেছে বিভিন্ন পত্রিকা।’
সাড়ে তিন মাস কারাভোগের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির এই নেতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত ৩১ অক্টোবর মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
জেলে থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘চিকিৎসাসুবিধা, যেখানে বরাবর ভয় পেয়েছি।
আমরা বারবার সতর্ক করেছি যে ফখরুল সাহেবের (বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) বয়স এত, আমার বয়স এত—বিভিন্ন জটিল রোগে আমরা আক্রান্ত, সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে আসেন, অথবা আমাদের যেতে দেন। বলে যে না স্যার, নিষেধ আছে, যাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, জেলখানায় আপনারা পচে মরে যান, কিন্তু চিকিৎসা করা যাবে না।’
বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস উল্লেখ করেন, এবার জেলখানায় তাঁর জন্য সব দিক থেকেই ভীষণ কষ্টের ছিল। তিনি সাংবাদিকদের কাছে কারাগার নিয়ে তাঁর ভয়ের কথা তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘প্রশ্ন করলে ভালো, কিন্তু খুব সাবধানে ভাই।
দেখেন, এবারের মতো জেল আমি কখনো খাটি নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই ১৯৭৮ সাল থেকে আমার জেলজীবন শুরু হয়েছে। আমি মাটিতেও শুয়েছি। অ্যালুমিনিয়ামের ভাঙাচোরা, আঁকাবাঁকা প্লেট; অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাসের মধ্যেও পানি খেতে হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে থাকতে হয়েছে। প্রথম যখন আমি জেল খাটি, তখন আমার বয়স ২৭ বছর। এখন ৭৭ ছুঁইছুঁই। কত বছর হয়ে গেল। এবারের জেলখানা একটু ব্যতিক্রম। সবাই সব সুবিধা পাচ্ছে, যখন আমরা চাই পাই না।’
‘রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্বস্তিতে মানুষ’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের মানুষ স্বস্তিতে পবিত্র রমজান পালন করতে পারে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো একটা সময় আমি পাই নাই বা দেখি নাই যে এ দেশের মানুষ স্বস্তিতে রমজান পালন করেছে। এবারও জিনিসপত্রের দাম কোনোটাই কম নাই। এখন মানুষ আর বলতে চায় না। যারা তিনবেলা খেত, এখন দুইবেলা খায়। যারা দুইবেলা খেত এখন একবেলা খায়—এ রকম অবস্থা হয়ে গেছে। এখন দাম নিয়ে কারও মাথাব্যথা নাই। সরকারেরও মাথাব্যথা নাই, মানুষও বোধ হয় সহনশীল হয়ে গেছে যে এটাই নিয়ম।’
‘আমরা না পারি আর কেউ করবে’
রাজনৈতিকভাবে সামনে কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা এখনো বলার সময় আসে নাই। আমাদের নেতা-কর্মীরা জেলের ভেতরে আছেন এখনো। কেউ চিকিৎসাধীন। সব ঠিকঠাক হয়ে আসার পর আমরা নতুন করে সিদ্ধান্ত নেব।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র, ভোট, কথা বলার অধিকার রক্ষার এই আন্দোলন চলবে, থেমে থাকবে না। আমরা না পারি, আর কেউ করবে।’