ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের প্রধান ভবনে (পুরোনো ভবন) হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার আসন না পাওয়া নিয়ে তিন দিন ধরে উত্তেজনা ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে সংগঠনের দুই পক্ষ। এ পরিস্থিতিতে রোববার হলের নেতাদের ডেকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।
আজ রোববার ডাকসু ভবনে শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শরিফ আহমেদের সঙ্গে কথা বলে এই নির্দেশনা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান।
শহীদুল্লাহ্ হল শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশনা দেন তাঁরা। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলে গিয়ে হামলাকারী নেতাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শহীদুল্লাহ্ হলে তিনটি ভবন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা থাকেন প্রধান ভবনে (পুরোনো ভবন)। এ ভবনে আসন পাওয়াকে ‘সম্মানের’ মনে করা হয়। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েও ভবনটিতে আসন পাননি হল শাখা ছাত্রলীগের একজন নেতা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে ওই হলে মারধরে জড়ায় হল শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান ভবনে আসন পাওয়ার বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদের সঙ্গে কথা বলতে যান, সেখানে গিয়ে তাঁর অনুসারীদের মারধরের শিকার হন হল শাখার সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক হলে গিয়ে অভিযুক্ত হামলাকারী মুশতাক শাহরিয়ার নামের এক নেতাকে হলছাড়া করার নির্দেশ দেন। পরদিন শুক্রবার রাতেও সংঘর্ষে জড়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারী দুটি পক্ষ। এদিন সংঘর্ষে পাঁচ-ছয়জন আহত হন। এরপর শনিবার রাতেও মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। পরে হল প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষ সাময়িক নিবৃত্ত হয়। এরপর আজ হলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দিল ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।
হল ছাত্রলীগের নেতা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনার সমাধান না হওয়ায় শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার পর হল প্রাঙ্গণে মুখোমুখি অবস্থান নেন সাদ্দাম হোসেন ও তানভীর হাসানের অনুসারীরা। সাদ্দামের অনুসারীরা প্রধান ভবনের সামনে এবং তানভীরের অনুসারীরা অবস্থান নেন হল মাঠের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত ভবনের সামনে। এ সময় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতেই ছিল লাঠি, লোহার পাইপ ও রড। অনেকের মাথায় হেলমেটও ছিল।
দুই পক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থান ও চিৎকার-চেঁচামেচিতে হলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে হলের আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে হলে যান প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন। হলের আবাসিক শিক্ষকের কক্ষে বসে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও দুই পক্ষ পুরোপুরি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তবে শনিবার রাতে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা আর সংঘর্ষে জড়াননি। প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে যে যার মতো চলে যান।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগকে হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাস ও হলের সার্বিক পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠদের অভিমান ছিল। বিষয়টা আমরা মীমাংসা করে দিয়েছি। তাঁরা আবার এক হয়েছে। হলে আর কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার রাতে দুই পক্ষের সঙ্গে বসে মিটমাট করে দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষ কোলাকুলি করেছে। আশা করি, এখন আর হলে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নেই। পরবর্তী সময়ে ক্ষতিকর কিছু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহীদুল্লাহ্ হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য থাকা ১৩টি আবাসিক হলে আসন বরাদ্দে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ। দেড় মাস আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর চারজন নেতাকে কেন্দ্র করে হলগুলোতেও নতুন নতুন পক্ষ তৈরি হয়েছে। আসন বাঁটোয়ারা নিয়ে নিয়মিতই দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে পক্ষগুলো। এরই ধারাবাহিকতা শহীদুল্লাহ্ হলের সর্বশেষ মারামারি।