আওয়ামী লীগকে বন্ধু বানাতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে শত্রু বানিয়েছে ভারত: মেজর হাফিজ

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে রয়েছেন অন্য অতিথিরা। আজ শুক্রবার, জাতীয় প্রেসক্লাবেছবি: প্রথম আলো

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভারত সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল, আওয়ামী লীগকে বন্ধু বানাতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে শত্রু বানিয়েছে। তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায় না। তারা লুটপাট চোরের দলকে বন্ধু বানিয়েছে।

কেয়ামত পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব থাকার কথা ছিল উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের উত্ত্যক্ত করার কারণেই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়েছে। অবৈধ শাসক, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে গিয়ে তারা বাংলাদেশের ১৯ কোটি মানুষকে শত্রু বানিয়েছে।’

‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি চেতনার জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর হাফিজ এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্ট।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতিককালে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের দেশকে, নিজেদের সমাজকে তো ধ্বংস করছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রকেও নষ্ট করছেন। এঁদের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন। তাঁর আসার আগে বাংলাদেশ এমন ছিল না। একজন মহিলা যে এত নিষ্ঠুর হতে পারেন, মানুষ গুম ও হত্যা করতে পারেন, এত টাকা মানি লন্ডারিং করে নিয়ে যেতে পারেন, তিনি শেষ হাসিনা। হাজার হাজার মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের নির্যাতন করেছেন তিনি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্ব আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছে। অথচ বাংলাদেশ তো ইসলামিক রিপাবলিক না, এ দেশ তো পিপলস রিপাবলিক। আমরা সব ধর্মের-বর্ণের মানুষকে নিয়ে সুন্দর একটি দেশে বসবাস করতে চাই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র থাকার পরেও এ কারণেই আমরা যুদ্ধ করেছি। আমাদের কাছে মানবতা বড়। গণতন্ত্রের জন্য, মানবতার জন্য যুদ্ধ করেছি। ধর্ম নিয়ে আমরা কারও মন্দির ভাঙতে যাই না।’

মেজর হাফিজ আরও বলেন, ভারতের বিজেপি নামের দলটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে। গোটা ভারতবর্ষে তারা এ সম্প্রীতি নষ্ট করেছে। হিন্দুত্ববাদের কোনো দরকার নেই। কিন্তু তারা হিন্দুত্ববাদের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে এই নেতা বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের খুনিদের কিছু করতে পারছি না। এ সরকারের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসরেরা এখনো বসে আছে। এখন সরকারের অনেক উপদেষ্টা আছে, শেখ হাসিনার জার্সি পরে ওই টিমে আগে খেলে আসছেন। এখন এখানে খেলতে এসেছেন।’

সভায় গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘দেশে কিছু অপশক্তি এখনো আছে। নানাভাবে নিপীড়ন–নির্যাতনের চেষ্টা করছে। ৫৪ বছর ধরে যত নির্যাতন হয়েছে, আমরা বিচার পাইনি। বিচার না হওয়ার কারণেই নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে।’

সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে অনেক ঘটনা ঘটছে। আবার অরাজনৈতিকভাবেও কিছু ঘটনা ঘটছে। সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। কেন আজ বহিঃশক্তি এখানে নাক গলায়। আপনাকে (অন্তর্বর্তী সরকার) শক্ত হতে হবে। তিন মাস পেরিয়ে চার মাস হয়ে গেল, এখনো স্বরাষ্ট্র নড়ে না, চড়ে না। কথাবর্তায় কোনো আওয়াজ দেখি না। সরকার এই কয়েক মাসে ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কী করেছে। সেখানে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, আর বললেই হবে আসেন দেখে যান। সত্য প্রকাশে কর্মসূচি নেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছিলাম। ভারতের অপপ্রচারের বিষয়গুলো সেখানে উঠে এসেছে। ধর্মীয় সংঘাতের কারণ, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অনুসন্ধান করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জানতে হবে।

সুকোমল বড়ুয়া আরও বলেন, সরকার চলে গেলেই সব চলে যায় না। তাদের নানা মানুষ জায়গায় জায়গায় থেকে যায়। রাজনৈতিক বিষবাষ্প থেকে যায়। যারা চলে যায়, তাদের বেদনা থাকে। তারা লক্ষ্য করে ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীকে। বিষবাষ্প জ্বলে উঠছে। কোন মিডিয়া এসব করছে, সেগুলোও চিহ্নিত করতে হবে। সংঘাত–সহিংসতা পরিহার করে সংযমের পরিচয় দিতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের সভাপতি অপর্ণা রায় দাস। ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসুর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম, ফ্রন্টের নেতা অমলেন্দু অপু প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।