পুলিশের গুলিতে দুই নেতার মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ বলছে বিভিন্ন দল
পুলিশের গুলিতে ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ বলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। তাদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ মিছিলে গুলি করতে পারে না। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।
ভোলার ঘটনায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য ও এলডিপি (একাংশ) পৃথক বিবৃতিতে এসব দাবি জানায়।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানান। যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, অতীতের মতো বর্তমান সরকার মানুষের দাবি-দাওয়ার আন্দোলন দমনে ভীতি ছড়াতে এবং গদি রক্ষায় দমন-পীড়ন-সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। দেশ আইনের শাসনে চলছে না। ক্ষমতার দম্ভে, আধিপত্য বিস্তারে সরকারি দল নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে, রক্ত ঝরাচ্ছে। নানা ধরনের অস্ত্রের মহড়া প্রকাশ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। বিবৃতিতে হত্যা, হামলা, মামলা, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হয়ে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বিএনপির সরকারের সময়ে ইয়াসমিন হত্যা, কানসাট ও ফুলবাড়ীতে হত্যাকাণ্ডসহ সারের দাবিতে কৃষক, মজুরির দাবিতে পাটকল শ্রমিকের ওপর নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এ ধরনের দমন-পীড়ন-হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এ সরকারও গদি রক্ষা করতে পারবে না।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি চালিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে শেখ হাসিনা সরকার গদি দখলে রাখায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিবর্ষণে দুজনের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
পৃথক বিবৃতিতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বিবৃতিতে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ মিছিলে গুলি করতে পারে না। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম এবং জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলমের নিহত হওয়ার ঘটনা একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ভোলার ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এক বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের নীতি গ্রহণ করেছে এবং এর বিরুদ্ধে যখন জনবিক্ষোভ গড়ে উঠছে, তার ওপর সরকার রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন-নিপীড়ন ও সভা-সমাবেশে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে মানুষ খুনের মতো ঘৃণ্য পন্থাকে গ্রহণ করেছে বর্তমান জনসমর্থনহীন ফ্যাসিস্ট সরকার। জনগণের টাকায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে জনবিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করছে। নুরে আলম ও আবদুর রহিম হত্যার দায় সরকারের। এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ভোলায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।