সরকার পতনের আন্দোলন ও কমিটি পুনর্গঠনে ব্যর্থতার কারণে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা মনে করছেন। এতে খুশি তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা। তবে দু-একজন নেতা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তৃণমূল নেতা–কর্মীরা জানান, তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি সাড়ে তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। আর নির্বাচনের আগে আন্দোলনে রাস্তায় ছিলেন নেতারা। সংগঠিত করতে পারেনি কর্মীদের। কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল ছিল দলটি।
এদিকে নতুন কমিটিতে কারা আসতে পারেন, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন। তবে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা জানান, আন্দোলন–সংগ্রামে দলকে এগিয়ে নিতে পারেন, সবার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এমন নেতাদের চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কান্ডারির দায়িত্ব দেওয়া উচিত। নইলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেমকে সদস্যসচিব করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এক বছরেও সম্মেলনের আয়োজন করতে না পারায় নাখোশ হয় কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও তা পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি।
তবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়। ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান নগরের আওতাধীন ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এরপর একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের আহ্বায়ক, সদস্যসচিব এবং ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কের সমন্বয়ে পৃথক ১৫টি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রতিটি থানায় ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কর্মিসমাবেশ শুরুও হয়। হালিশহর ও পাহাড়তলী ছাড়া বাকি ১৩ থানায় সমাবেশও করা হয়। এ দুই থানায় কর্মিসমাবেশ শেষে একযোগে ১৫ থানায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল।
বিলুপ্ত কমিটির সূত্র জানায়, এ অবস্থায় অক্টোবর মাসে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে, থানা কমিটির আগে ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউনিট কমিটি গঠনের আগে সদস্য সংগ্রহেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে জন্য একটি তথ্য সংগ্রহ ফরমও পাঠায় কেন্দ্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে থানা কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে নগর বিএনপি। প্রায় সব কটি ওয়ার্ড প্রস্তুতও হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো এবং মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচির কারণে ঘোষণা করা হয়নি ওয়ার্ড কমিটি গঠন।
তৃণমূল পর্যায়ের ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানিয়েছেন, পদ-পদবি ছাড়া তাঁরা আন্দোলন–সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। কারাগারে গেছেন। যথাসময়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠিত হলে দলের আন্দোলন–সংগ্রাম আরও বেগবান হতো। শুধু মিছিল–সমাবেশে অংশ নিলেই আন্দোলন সফল হয় না। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে পুলিশ যখন রাস্তায় নামতে বাধা দিয়েছিল, তখন কেউ নামতে পারেননি। নেতারাও ছিলেন না। অথচ আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বিএনপি, যা গত নির্বাচনের আগে সেই পরিচয় দিতে পারেনি। কমিটি থাকলে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে রাজপথে পুলিশসহ বিরোধীদের মোকাবিলা করতে পারত।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে এ বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে চট্টগ্রামে মাঠে ছিলেন না কোনো নেতা–কর্মী। শেষের দিকে এসে হঠাৎ রাস্তা কিংবা অলিগলিতে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠিয়েই আন্দোলন কর্মসূচি শেষ করেছেন তাঁরা। নগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও দেখা যায়নি। বিএনপির এক কর্মী জানান, যেখানে নেতারা ছিলেন না, কর্মীরা কী করবেন।
এদিকে নতুন কমিটিতে নগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সদস্য এরশাদ উল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুর রহমান, এস এম সাইফুল ইসলাম, আবুল হাশেমের নাম শোনা যাচ্ছে। এরশাদ উল্লাহ, আবুল হাশেম আহ্বায়ক, নাজিমুর রহমান, সাইফুল ইসলাম সদস্যসচিব হতে পারেন। আবার শাহাদাত আহ্বায়ক থাকতে পারেন, এ রকমও শোনা যাচ্ছে।
জানতে চাইলে নগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় হাই কমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তা–ই মেনে নেব। আমি নিজেও দীর্ঘদিন থেকে চাইছি কেন্দ্রে চলে যেতে।’
কমিটি গঠনে ব্যর্থতা অস্বীকার করে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নানা কারণে হয়নি। কেন হয়নি, সবাই জানেন।’ সরকার পতনের আন্দোলনে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন, দাবি শাহাদাতের।