ইভিএমের কারণে ধীরগতি ও কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট। কুমিল্লায় একটি কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আজ শনিবার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল চারটায়। ইতিমধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে বিকেল পৌনে ৬টার সময়ও ভোটগ্রহণ চলছিল। এই সিটিতেও ভোটের ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে সকাল ১০টায় কুমিল্লা নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সী এম আলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কেন্দ্রের পাশে মেয়র প্রার্থী নিজামের কর্মী জহিরুল আহমেদ ও তুহিনকে গুলি করেন মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা। আহত জহিরুল ও তুহিনকে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দিন এ ঘটনার জন্য বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহারের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে তাহসীন বাহার বলেছেন, তাঁর দিকে কেন অভিযোগ, তিনি জানেন না।
সকাল আটটায় ভোট শুরুর কিছু পরেই কুমিল্লা হাইস্কুল কেন্দ্রে বাস প্রতীকের এজেন্ট ছাড়া অন্য প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। দু-একটি বুথে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আরেক প্রার্থী নূর উর রহমানের হাতি প্রতীকের এজেন্ট দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এই কেন্দ্রে বাস ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের মধ্যে মারামারি হয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রিয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুলিশ লাইনস স্কুল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আকরামউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দৈয়ারা স্কুল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাকতলা প্রাইমারি ও হাইস্কুল কেন্দ্রেও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাউকে বের করে দেওয়া হয়নি ও মারামারি হয়নি বলে জানান।
ময়মনসিংহ সিটিতে মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক ভোট দিয়ে ইভিএম মেশিন নিয়ে ভোটারদের ভোগান্তির কথা জানান। ময়মনসিংহ নগরের মহাকালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র, নাসিরাবাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তিনটি কেন্দ্র, কালীবাড়ি এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলের কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ধীরগতিতে ভোট নেওয়ার কথা বলা হয়। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলায় কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের হাতে পেট্রোলিয়াম জেলি দিতে দেখা গেছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রেও ইভিএম মেশিনের জটিলতার কারণে ধীরগতিতে ভোট নিতে দেখা যায়।
কুমিল্লায় ভোট হয়েছে শুধু মেয়র পদে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ অবসান হওয়ায় সেখানে মেয়র ও কাউন্সিলরের সব কটি পদে ভোট হয়েছে।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোট হলেও ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় আজ ভোট হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এর আগে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল ভোটারদের। এবারও চিত্রটা প্রায় একই রকম।
বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করায় এবার দুই সিটির নির্বাচন অনেকটা ‘নির্দলীয়’ হয়েছে। মেয়র নির্বাচনে এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুজন ও ময়মনসিংহে তিনজন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ না নিলেও কুমিল্লায় ভোটের আলোচনায় আছে বিএনপিও।
ময়মনসিংহে বিএনপির কেউ প্রার্থী না হলেও কুমিল্লায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা প্রার্থী হয়েছেন। ফলে কুমিল্লায় বিএনপির ভোটাররাও জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে আলোচনা আছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ নগর আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষ রয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই প্রার্থী থাকায় সেখানে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি সামনে এসেছে।
কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে (পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ) মোট ২৩১টি নির্বাচন ও উপনির্বাচন হয়েছে আজ।
কুমিল্লায় এবার মেয়র পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা হলেন তাহসীন বাহার ও নূর উর রহমান মাহমুদ (তানিম)। এর মধ্যে তাহসীন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবা সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। তাহসীনকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। আরেক প্রার্থী নূর উর রহমান কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা।
ময়মনসিংহে এবার মেয়র পদে প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক (টিটু), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান। এই তিনজনের বাইরে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কৃষিবিদ রেজাউল হক ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম।