‘গণহত্যা’র বিচারে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছে জামায়াত

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন দলের সঙ্গে সংস্থার কার্যালয়ে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ঢাকা, ২৯ আগস্টছবি: বিজ্ঞপ্তি

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ‘গণহত্যা’র বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে ‘ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি’ নামে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এর তদন্ত ও সঠিক বিচারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন দলের সঙ্গে সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুরোধ জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশে ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধিত হয় ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানুষ নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই গণবিপ্লবের সময় সরকার যে হত্যা, জুলুম, নির্যাতন করেছিল, সেই বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম বাংলাদেশ সফর করছে। এটা মূলত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম। এরপর মূল টিম আসবে।

তাহের বলেন, ‘মূলত বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ দেশের জনগণের ওপর নানাবিধ অত্যাচার করেছে, হত্যাকাণ্ড করেছে—এসব বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিল, আমরা তাদের তথ্য দিয়েছি।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী সরকার ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। তখন তারা ৩০ হাজারের মতো মানুষ হত্যা করেছিল। এবার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিডিআরের ঘটনায় ৫৭ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও স্বৈরাচারী সরকার জড়িত ছিল। রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে যে গণহত্যা করেছিল, আমরা সেটার কথাও তাদের বলেছি। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার মহাবিপ্লবকে ব্যর্থ করার জন্য তারা নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেটাও তাদের অবহিত করেছি।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরকারের নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে তাহের বলেন, ‘সে সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয় সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর। মনে হয়েছিল, বিদেশিদের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে। নিজ জনগণের ওপর দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। সেখানে দেড় বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আমরা এটাকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি।’

জামায়াতের এই নেতা জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন দল এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, বিষয়গুলো জানার জন্য তারা এসেছে। তারা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে। ফ্যাক্টসগুলো নিয়ে তারা রিপোর্ট দেবে। এরপর বিচারে সহযোগিতা, আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞরা আসবেন। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন।

‘সাত শতাধিক মানুষকে গুম করা হয়েছে’

‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সাত শতাধিক মানুষকে গুম করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহহিল আমান আযমী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী আরমান আহমদ বিন কাসেম দীর্ঘ আট বছর পর গুম অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এখনো গুম অবস্থায় আছেন জামায়াত নেতা হাফেজ জাকির হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আল মোকাদ্দাস ও মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ। এ ছাড়া বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী ও সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমসহ বহু মানুষ এখনো গুম অবস্থায় আছেন।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুম হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। একই সঙ্গে গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।