সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে কিছু মানুষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরফাইল ছবি

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন হামলা হয়েছে। সেগুলো সুসংগঠিত (সিস্টেমেটিক) হামলা নয়। এসব হামলা চালিয়ে কিছু মানুষ চলমান পরিস্থিতির সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে শনিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বা অন্য কোনো দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় যখন কোনো পরিবর্তন আসে, কিছু মানুষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের প্রতিটি বিপ্লবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা—তাঁরা হিন্দু বা মুসলমান যে ধর্মের হন না কেন, শিকারে পরিণত হন।’

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ‘অসাধারণ’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘(বাংলাদেশে) হয়তো (সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর) বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা হয়েছে। তবে সেগুলো কোনোভাবেই সুসংগঠিত (সিস্টেমেটিক) বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।’

যেকোনো সময়ে বিএনপি নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন আয়োজনের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, পুরো নির্বাচনব্যবস্থাই দূষিত হয়ে গেছে। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অবস্থায় নেই। নির্বাচনব্যবস্থায়ও সংস্কার আনতে হবে তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার)।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবেন।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতিতে সেনাবাহিনী কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী যে দেশের রক্ষক, সে বিষয়ে মানুষের বিশ্বাস রয়েছে। তাই আমার মনে হয় না তারা (সেনাবাহিনী) এমন কিছু করবে, যা দেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়।’

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি বলে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন। সেখানে কোনো জবরদস্তি বা এমন কিছু ছিল না। এটি ছিল একটি বিপ্লব। যখন লাখ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন, তখন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী তাঁকে দুটি বিকল্প দিয়েছিল। একটি হলো থেকে যাওয়া এবং বিক্ষুব্ধ জনতার মুখোমুখি হওয়া। অপরটি হলো দেশ ছেড়ে যাওয়া। আর শেষ মুহূর্তে তিনি (শেখ হাসিনা) দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।’

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়া হবে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের বিষয়ে মির্জা ফখরুল এনডিটিভিকে বলেন, তিনি (ওবায়দুল হাসান) শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, যে সরকার অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তাঁকে (ওবায়দুল হাসান) পদত্যাগ করতে হয়েছে।

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততা ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন কোনো কিছু ছিল না। জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত চরমপন্থী দল নয়। তবে বাংলাদেশে চরমপন্থী কিছু গোষ্ঠী ছিল, সেগুলোর অস্তিত্ব এখন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’ তিনি বলেনে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদের নেতৃত্বে হয়েছে। তাদের অধিকাংশেই অতি প্রগতিশীল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই অসাধারণ মেধাবী। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই বিপ্লব অবশ্যই সফল হবে।’