বিভেদ কমাতে তৃণমূলে যাবেন আওয়ামী লীগ নেতারা 

এখন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরের মাধ্যমে নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের বিভেদ মিটিয়ে ঐক্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগ

দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সফর করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশলের প্রেক্ষাপটে দলের তৃণমূলে কোন্দল–বিরোধ বেড়েছে। এখন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরের মাধ্যমে তৃণমূলে বিভেদ মিটিয়ে ঐক্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

গতকাল বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের যৌথ সভায় এই কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

জনগণকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে। অনেক দেশ পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। বিএনপির বর্জন করা ছাড়া এ নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো কথা বলার নেই। ভালো নির্বাচন হয়েছে, সে প্রশংসা আসছে। কেবল বিএনপি নির্বাচনকে গ্রহণ করতে পারছে না। তারা এখন বলছে সংসদ অবৈধ।
ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

বৈঠকের শুরুতে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে বক্তৃতা করেন। এরপর উপস্থিত কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কৌশলের অংশ হিসেবে। জয়–পরাজয় যা–ই হোক না কেন, এখন ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোথাও সহিংসতা হলে দায়ী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সফরের কথা বলেন। সফরের সময়সূচি এবং কারা কোন জেলায় যাবেন, তা পরে ঠিক করা হবে। 

উল্লেখ্য, নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় সারা দেশে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। সহিংসতায় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় আক্রমণকারী ও আক্রমণের শিকার প্রায় সবাই নৌকা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থক।

বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন ওবায়দুল কাদের। 

নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় সারা দেশে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। সহিংসতায় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় আক্রমণকারী ও আক্রমণের শিকার প্রায় সবাই নৌকা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থক।

‘স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌশলের অংশ’

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করায় নতুন রণকৌশল নিতে হয়েছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বড় অংশ। জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে রণকৌশল নিতে হয়েছে, যার সোনালি ফসল ঘরে তুলেছে আওয়ামী লীগ। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। 

বিএনপির আস্ফালন কোথায় গেল—এ প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে। অনেক দেশ পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। বিএনপির বর্জন করা ছাড়া এ নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো কথা বলার নেই। ভালো নির্বাচন হয়েছে, সে প্রশংসা আসছে। কেবল বিএনপি নির্বাচনকে গ্রহণ করতে পারছে না। তারা এখন বলছে সংসদ অবৈধ।

আওয়ামী লীগকে নির্বাচন শেখাতে হবে না মন্তব্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। সরকারি দলের প্রার্থীকেও শোকজ করেছে কমিশন। গণতন্ত্রের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা কি পাতানো নির্বাচন ছিল? আপনার কি মনে হয়? পৃথিবীর নামীদামি গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশের এ নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে, এ কথা বলে প্রশংসা করে কেন? আমাদের আশপাশে কেউ বাকি নেই। পাকিস্তানের হাইকমিশন পর্যন্ত আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’

আরও পড়ুন

বিএনপি এখন কাকে নিয়ে খেলবে?

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যাকে নিয়ে আপনারা (বিএনপি) আমাদের কত রঙ্গ দেখালেন, কত জাদু দেখাইলেন, সেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব অভিনন্দন জানিয়েছেন। এখন কাকে নিয়ে খেলবেন? কাকে নিয়ে আর এটা করবেন, ওটা করবেন? এখন স্বপ্ন দেখছেন কখন বিশাল নিষেধাজ্ঞা, কখন ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে, কখন নিষেধাজ্ঞা আসবে। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধরুন।’

সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এর মধ্যে উল্টাপাল্টা বলে কোনো লাভ নেই। অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচ বছর পর আবার চালু হবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দীপু মনি; সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া প্রমুখ।