বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি হুঁশিয়ার করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, এখনো সময় আছে পদত্যাগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করে, তাহলে দেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক গণসমাবেশ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দ্রুত মনস্থির করেন, কীভাবে পদত্যাগ করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অধীনে কীভাবে নির্বাচন দেবেন। আগামী ২৮ অক্টোবর (শনিবার) ঢাকায় মহাসমাবেশের পরে আর সময় দেওয়া হবে না।’
সরকার এখন দেশবাসীকে হুমকি দিচ্ছে দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘তলেতলে আপস হয়ে গেছে, হাসের মুরুব্বিদের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গেছে, দিল্লি আমাদের পাশে আছে’—এসবে যখন কাজ হচ্ছে না, তখন দেশের মানুষকে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু মানুষ ভয় পায় না। তারা রাজপথ দখল নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন সফল করবে। তাই জনতার দাবি মেনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিদায় নিন।
শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের মানুষ ’৯০–এর মতো গণ-অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না, রাজপথ দখলে নিতে দেওয়া হবে না বলে যতই হুমকি দেওয়া হোক, জনগণ আর এসবে ভয় পায় না।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন রাস্তা দখল করতে দেবেন না। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।’ ওবায়দুল কাদের ও আওয়ামী লীগের নেতাদেরও পাখা গজিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, লুটপাট, অর্থ পাচার করে এই সরকার ১৫ বছরে দেশটাকে জাহান্নামে পরিণত করেছে। সাধারণ মানুষ আছে দোজখের আগুনে। বাজারে দামের আগুন, পেটে ক্ষুধার আগুন। কিন্তু এই সরকার এতই নির্লজ্জ যে তাদের ভাব এমন, মার কাট যাই কর, টাকার গাট্টি ছাড়ব না।
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে যেভাবে অ্যাকশনে গিয়েছেন, বিরোধদের বিরুদ্ধে নাকি সেভাবেই অ্যাকশনে যাবেন। এই কথার মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিলেন যে ওই রাতে তাঁরা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলেন। তবে এসব হুমকি দিয়ে রাজপথ থেকে সরানো যাবে না।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগের) সামনে আর কোনো উপায় নেই বলে সরকার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। কারণ যে কোনোভাবেই হোক তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। তারা ক্ষমতায় না থাকলে নাকি দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
এই উন্নয়নের সমালোচনা করে রফিকুল ইসলাম বলেন, এত এত উন্নয়ন হয়েছে যে দেশের রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে আসছে। আর এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি কথা বললে নাকি তিনি সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রবসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।