নির্বাচন নিয়ে ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রশংসাতেই যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি হয়তো একটু অন্য রকম বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকেরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।
নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি খানিকটা নেতিবাচক—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ, সাবেক কংগ্রেসম্যান, সিবিএস নিউজের চিফ নিউজ এডিটর এবং অন্যান্য দেশ তথা জার্মানি, ইইউ পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য ছিলেন। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকেরাও নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা জানেন, ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নির্বাচন সুন্দর হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমরা সব সময় দেখে এসেছি, চীন, রাশিয়া যা বলে, যুক্তরাষ্ট্র তার উল্টোটা বলে। ভারত, চীন, রাশিয়া একযোগে যখন বলেছে, আমাদের নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে, তারা যদি এই অভিনন্দনটা ইতিমধ্যেই না দিত বা এই অভিমত ব্যক্ত না করত, তাহলে হয়তো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিটা অন্য রকম হতো বলে আমার ধারণা।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে এবং বিশ্ব অঙ্গনেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করবে, সেটি ওই বিবৃতিতেও বলেছে।’
বিএনপিসহ যারা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেন মাহমুদ। তিনি বলেন, ভোটের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা, ভোট বর্জনের ডাকের পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি ট্রেনে বর্বরোচিত হামলা এবং ৪, ৫, ৬ জানুয়ারি বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, দেশে কার্যত একটি ভোট উৎসব হয়েছে।
দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, উৎসবমুখর পরিবেশে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো কোনো জায়গায় ভোট প্রদানের হার ৭০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি, গড়ে ৪১ দশমিক ৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ। আমার এলাকায় ৬৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এর চেয়েও বেশি সম্ভবত ৮০ শতাংশ।’
‘মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতি একপেশে’
নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিবৃতিটি পড়েছি। বিবৃতিতে আগুন–সন্ত্রাস করে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো কথা নাই। সেখানে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে, অথচ গ্রেপ্তার তো তাদেরই করা হচ্ছে, যারা আগুন–সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার হাইকমিশনারকে বলব যে গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু বলার জন্য।’