বিএনপির বহিষ্কারাদেশ আমলে নিচ্ছেন না ভোটে অংশ নেওয়া নেতারা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপেই ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা এখন দলের এই বহিষ্কারাদেশকেও উপেক্ষা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপির বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। দলের এই বহিষ্কারাদেশ নিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা করছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সরোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল আমাকে বহিষ্কার করছে, এটা আমি জানি। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। পরেরটা পরে দেখা যাবে।’
দলটির বহিষ্কৃত আরও তিনজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তাঁরা দলের বহিষ্কারাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত এবং শেষপর্যন্ত ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে চান তাঁরা।
যে ৭৩ জনকে বিএনপি বহিষ্কার করেছে, এর মধ্যে ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রয়েছেন। বহিষ্কারের তালিকার ১ নম্বরে রয়েছেন শিরিন আক্তার। তিনি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বান্দরবান জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
শিরিন আক্তার গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকেরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি এর বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করব না। স্থানীয় প্রেক্ষাপট এবং আমার ব্যক্তিগত কারণে আমাকে নির্বাচনটা করতে হচ্ছে। আমি একনাগাড়ে তিনবারের ভাইস চেয়ারম্যান। এটুকু বলব, আমি দলকে ভালোবাসি, এলাকার মানুষও আমাকে অনেক ভালোবাসেন।’
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ভোটে অংশ নেওয়া দলের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপি মাঠপর্যায়ে চরম বার্তা পৌঁছাতে চেয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশ আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপসহ মোট চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন রয়ে গেছে। সেখানেও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মূলত দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গতকাল একসঙ্গে ৭৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাতে আগামী ধাপের নির্বাচনগুলোর ব্যাপারে নেতারা সতর্ক হন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার প্রশ্নে শুরু থেকেই বিএনপির নেতৃত্ব কঠোর অবস্থান নেয়। দলের অবাধ্য হয়ে যাঁরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, তাঁদের ফেরানোর নানা চেষ্টা-তদবির করে ব্যর্থ হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার একযোগে বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বহিষ্কৃত নেতাদের নামের তালিকাও পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দল আবার রাজপথে সরকারবিরোধী শক্ত আন্দোলন গড়ার চিন্তা করছে। এ অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত রাখার দিকে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ।
এ ছাড়া নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যেসব কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেনি, সেসব কারণ এখনো বহাল; বরং একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল আরও কর্তৃত্ববাদী ও বেপরোয়া হয়েছে। এখনো হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাবন্দী, সারা দেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মী আদালতে ঘুরছেন। এর বিরুদ্ধে বিএনপিসহ সব বিরোধী দল আন্দোলনে আছে। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে।
কিন্তু গত ৭ জানুয়ারির বিএনপির নির্বাচনকে কেন্দ্র বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর দলটির তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যখন হতাশা তৈরি হয়েছে, অনেক নেতা–কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে বড় সংখ্যায় বহিষ্কার করার এই অবস্থান দলকে আরও দুর্বল করবে কি না, এই প্রশ্নেও আলোচনা রয়েছে বিএনপিতে।
তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কঠোর অবস্থান নিয়েই এগোতে চাইছেন। ফলে উপজেলা ভোটে অংশগ্রহণের প্রশ্নে ভিন্নমত দলটিতে গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেও বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলছেন।
ইতিমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনেও যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব কারণে এবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেই থাকার কথা বলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।