দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে নির্বাচনে
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা। পরে তা আরও বেড়েছিল।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কলিত ব্যয় আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় কেনাকাটার কাজ চলছে। শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও।
ইসি সূত্র জানায়, এবার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দুই দিনের ভাতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী কর্মকর্তার সংখ্যাও আগের চেয়ে বাড়ছে।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গত বুধবার ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাবও তুলে ধরা হয়। এবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে তাঁদের এক দিনের ভাতা দেওয়া হতো। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও এবার আরও বাড়বে। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি। যদিও প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
ইসির একটি সূত্র জানায়, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন মোট ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে থাকেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলে মোট খরচ আরও বাড়বে। সশস্ত্র বাহিনী সাধারণত মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। এবার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ খাতে ব্যয়ও এখন পর্যন্ত ধরা হয়নি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের পাশাপাশি এ এস এম সামছুল আরেফিনের লেখা বই বাংলাদেশের নির্বাচন ১৯৭০–২০০১ এবং নেসার আমিনের লেখা বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ও ফলাফল বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম সংসদ নির্বাচনে ইসির খরচ হয়েছিল ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে খরচ হয় ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে খরচ হয় ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে খরচ হয় ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ কোটি টাকা। এরপর সপ্তম সংসদ নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ৭১ কোটি টাকা। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে খরচ হয় ৯৫ কোটি টাকা। প্রথমবারের মতো শত কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছিল ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে ইসির ব্যয় হয় ১৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৫৩ আসনে ভোট হয়) খরচ হয়েছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা। পরে তা আরও বেড়েছিল।
নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলে মোট খরচ আরও বাড়বে। সশস্ত্র বাহিনী সাধারণত মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
ইসি সূত্র জানায়, এবার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দুই দিনের ভাতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী কর্মকর্তার সংখ্যাও আগের চেয়ে বাড়ছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কলিত ব্যয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটি নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এটি চূড়ান্ত হতে পারে।