সংবিধান–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করার পরামর্শ তারেক রহমানের
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া পরিহার করে সুচিন্তিত পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে দুর্গাপূজা–পরবর্তী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার পালানোর পর তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহল ছাড়াও খোদ বর্তমান সরকারের মধ্যেই নানা রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কেন বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে কিংবা বর্তমান সরকার কি বিপ্লবী সরকার? কেউ কেউ এ ধরনের প্রশ্নও তুলছেন। এ পর্যায়ে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরনের বিতর্ক সরকারের গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে, সরকারের লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার কারণ হতে পারে।
ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে মাফিয়া সরকারের পতন ঘটানোর পর এখন সবাই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর যাত্রাপথে থাকার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই যাত্রাপথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের (রাজনৈতিক দল) মধ্যে মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও প্রত্যেকের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। সেটা হলো, একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। যেহেতু আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন, সেহেতু নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝির অবকাশ আছে বলে বিএনপি মনে করে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমের উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। গত ১৫ বছরের জঞ্জাল ভেদ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে খেয়াল রাখা জরুরি, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা না গেলে, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রম জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়বে।
এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে অগ্রাধিকারভিত্তিক এজেন্ডা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি এবং তাদের দোসররা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ছিল না। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি এবং ভিন্নমতের কেউ নিরাপদে ছিল না। দীর্ঘ ১৫ বছর পর হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মুক্ত পরিবেশে পূজায় উৎসব উদ্যাপন করছেন।
এ বছর দুর্গাপূজায় বাংলাদেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি দাবি করে তারেক রহমান বলেন, এটিই ছিল বাংলাদেশের আবহমানকালের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা। কিন্তু ১৫ বছর ধরে কোনো উৎসব এলেই বিশেষ করে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উৎসব ঘিরে ইচ্ছে করেই সারা দেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হতো। নিজেদের হীন দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে পরাজিত অপশক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করত।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। দোসরদের কোনো উসকানিতে পা দেবেন না। কোনো গুজব-গুঞ্জনে দয়া করে কান দেবেন না।’ তিনি বলেন, সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু একটি শব্দ মাত্র। রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাষ্ট্রে ও সমাজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে হোক সে সংখ্যাগুরু, হোক সে সংখ্যালঘু—কেউ নিরাপদ নয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে সবাইকে নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘বহুদিন পর ৫ আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর আবার আমাদের সামনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আসুন আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাই।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সব ধর্মের লোকেরা মিলে এ দেশে একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। বিএনপির সহ–ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু অপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুকোমল বড়ুয়া ও আফরোজা খানম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব প্রমুখ।