মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনেও আচরণবিধি লঙ্ঘন
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করে চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও অন্তত আটজন সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করা যাবে না। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন স্থানে এই বিধি মানেননি সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র দাখিল করতে বড় মিছিল নিয়ে গিয়েছেন।
এর আগের দিন বুধবারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা যায়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করে গতকাল চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও অন্তত আটজন সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
তফসিল থেকে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনে ৩০০টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।
এটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্দেশনা দেওয়া আছে। সরকারি প্রটোকল নিয়ে জমা (মনোনয়নপত্র) দিতে পারবেন কি পারবেন না, সেটি সেখানে বলা আছে। এটি নিয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারছি না।রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে যাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে মহিব্বুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), আনোয়ার হোসেন খান (লক্ষ্মীপুর-১), র আ ম ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), মেহের আফরোজ (গাজীপুর-৫ ), নুর উদ্দিন চৌধুরী (লক্ষ্মীপুর-২), শফিকুল ইসলাম (নাটোর-১), পীর ফজলুর রহমান ( সুনামগঞ্জ-৪, জাতীয় পার্টি) ও ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত। শেষ দিনেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ভিড় ছিল বেশি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে যাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ।
সরকারি প্রটোকল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা হুইপের
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি ও পুলিশ প্রটোকল নিয়ে গতকাল বেলা সোয়া দুইটায় চট্টগ্রামে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।
আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না। তাঁরা নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যান্য সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
তবে মনোনয়নপত্র জমা শেষে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী দাবি করেন, ‘প্রটোকল ও পতাকা ব্যবহারে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আমি শুধু আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রটোকল পাব না, পতাকা পাব না। সুতরাং পতাকা ও প্রটোকল বন্ধ হবে আমার এলাকায় ঢুকলে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্দেশনা দেওয়া আছে। সরকারি প্রটোকল নিয়ে জমা (মনোনয়নপত্র) দিতে পারবেন কি পারবেন না, সেটি সেখানে বলা আছে। এটি নিয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারছি না।’
বিভিন্ন জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল নিজের নির্বাচনী এলাকার এক উপজেলায় সমাবেশে যোগ দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আরেক উপজেলায় সমাবেশে যোগ দেন আইনমন্ত্রী। জেলার কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় আইনমন্ত্রীর সমর্থনে বড় শোডাউন হয়।
গতকাল দুপুরে কয়েক শ নেতা-কর্মী সঙ্গে নিয়ে মিছিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন ঢাকা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ। তাঁর সঙ্গে আসা নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
ব্যানার-পোস্টার নিয়ে মিছিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। ঢাকা-৮ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এ ইউসুফের মনোনয়নপত্র জমা দিতে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন।
বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম তিনটি গাড়িতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আসেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। গাড়িতে লাগানো ছিল ডিজিটাল ব্যানার।
পটুয়াখালী-৪ আসনে নেতা-কর্মী নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে সড়ক বন্ধ করে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেন তিনি। গাড়িবহরসহ মহড়া দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ।