বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃ তদন্তে ‘আসল রহস্য’ উন্মোচিত হবে: বিএনপি
বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের পুনঃ তদন্তে ‘আসল রহস্য’ উন্মোচিত হবে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি আশা করে অন্তর্বর্তী সরকার নির্মোহভাবে ও নিরপেক্ষভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবে এবং দ্রুত বিচার শুরু করবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, এই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত ও ন্যায়বিচারপ্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করা হবে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো.জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন অফিসার মিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলাম…আমাদের সৃষ্ট এই সেনাবাহিনী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছিল প্রতিটি আন্দোলনে-সংগ্রামে জনগণের সাথি হয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছিল। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার জন্যই প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড।’
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয়।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ওই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক নিরীহ ব্যক্তি শাস্তি পেয়েছে, আবার অনেক দোষী ব্যক্তি শাস্তির আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দেখতে চান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।
এই ঘটনায় পুনঃ তদন্ত ও পুনর্বিচারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন হাফিজ।
পুনঃ তদন্তের কোনো সময়সীমা বিএনপি দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে চাই এই তদন্ত কমিটিকে। আমরা আশা করি দ্রুত তারা তদন্তকাজ এবং বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে। সময়সীমা বেঁধে দেয়া অত্যন্ত মুশকিল।’
‘বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনা এখনো ধোঁয়াশার’
হাফিজ বলেন, এই ঘটনায় তৎকালীন সরকারের এবং বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তা এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, এখানে বিদেশি হস্তক্ষেপ ছিল কি না, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটল, সে ব্যাপারে কমিশন গঠনের সুপারিশ নিয়ে গত ২৮ আগস্ট বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে একটি চিঠি দেয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুনসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কিছু আত্মীয় জড়িত বলে জনগণ মনে করে।
মেজর হাফিজ বলেন, দলটি আশা করে অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করলে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনায় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ‘আলোর মুখ’ দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শামসুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।