প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কেউ দায়ী থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
সম্পূরক প্রশ্নে মুজিবুল হক সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে চক্র তৈরি করা এবং অনেকের যেতে না পারার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেয়। ১৩টি দেশেরই লাইসেন্সধারী বৈধ সংস্থাগুলো কর্মী পাঠাতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই শুধু মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কিছু লোক মিলে নির্দিষ্ট কয়েকটি এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠাতে হয়।
মুজিবুল হক জানতে চান, মালয়েশিয়ায় অনেক কর্মীর যেতে না পারার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, বাংলাদেশের বৈধ সব এজেন্সির মাধ্যমে কেন কর্মী পাঠানো যায় না, এ জন্য দায়ী মন্ত্রণালয় নাকি কূটনীতিক?
জবাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার বিশেষ ফ্লাইট চালু করেছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ ফ্লাইট, অন্যান্য ফ্লাইটের সঙ্গে সংযুক্ত করে সবাইকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বাদ পড়ে গেছেন। বাদ পড়ার কারণ কী, সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই আমরা আলোচনা করে ঠিক করি কত লোক যাবে... তখনই দেখা যায়, আমাদের দেশের এক শ্রেণির লোক, যাঁরা জনশক্তির ব্যবসা করেন, তাঁরা তড়িঘড়ি করে লোক পাঠানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কিছু লোকও সংযুক্ত আছেন। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রতিবারই যখন সরকার আলোচনা করে সমাধানে যায়, তখনই কিছু লোক ছুটে যান, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। যাঁরা যান, তাঁদের কাজের ঠিক থাকে না, চাকরিও ঠিক থাকে না, বেতনের ঠিক থাকে না, সেখানে গিয়ে বিপদে পড়েন। এটা শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, অনেক জায়গায় ঘটে।’
প্রবাসে কর্মী পাঠাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষ দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেতে চান। এতে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার আমি দেশবাসীকে বলেছি, জমিজামা, ঘরবাড়ি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা খরচ করার দরকার নেই। যদি দরকার হয়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। প্রয়োজনবোধে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে যে তিনি যাচ্ছেন, তাঁর চাকরিটা সুনির্দিষ্ট কি না; এটা হলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।’
নিয়ম মেনে বিদেশ গেলে সমস্যা হয় না উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘তারপরও আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, কে আগে যাবে, সেই দৌড় দিতে যেয়ে হাতা-খাতা, বাড়ি-ঘর সববিক্রি করে, তারপরে পথে বসে। অথবা সেখানে যদি চলেও যায় বিপদে পড়ে।’
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার যে সমস্যা হচ্ছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি, কেউ দায়ী থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফেনী-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফেনী থেকে বিএনপির নেতা খালেদা জিয়া বারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফেনীতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া প্রকল্প ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া বন্ধ করে দেন। নিজের এলাকার উন্নয়নেও খালেদা জিয়া তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, ফেনীর যথাযথ উন্নয়ন হয়।
সংসদনেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফেনী যেহেতু খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা, এখানে বৈরী পরিবেশ সব সময় ছিল। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বঙ্গবন্ধু অথবা তাঁর পরিবারের নামে কোনো স্থাপনা হবে, এটা কখনো তারা চায়নি।’
‘সাইবার পুলিশ ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে’
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, নিরাপদ সাইবার স্পেস ও সাইবার অপরাধ দমনে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি আলাদা ‘সাইবার পুলিশ ইউনিট’ গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিশেষ চক্র, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক চক্র, যুদ্ধাপরাধী চক্র ও বিএনপি-জামায়াত ক্রমাগতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের একটি বড় অংশ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। তারা মূলত ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিকৃত খবর প্রচার করছে।
গুজব ও অপপ্রচার বন্ধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রোপাগান্ডা, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও গুজব প্রতিরোধে ২৪/৭ সাইবার প্যাট্রলিং জোরদার করা হয়েছে। গুজব সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে। গুজব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ও সাইবার সাপোর্ট হেল্প লাইনের মাধ্যমে গুজবসংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণের সাপেক্ষে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বিদেশে অবস্থানরত গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না করা হলে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে প্রকল্প অনুমোদনের পর বাস্তবায়নকালে প্রায় সব প্রকল্পই এক বা একাধিকবার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধি বা ব্যয় বৃদ্ধিসহ সংশোধন হয়ে থাকে। এতে এডিপি বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়।