সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসছবি: বাসস

নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে রোডম্যাপ বা রূপরেখা তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ শনিবার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলগুলোর কাছ থেকে সংস্কারের লিখিত প্রস্তাব নেওয়ার পর তার ভিত্তিতে রূপরেখা তৈরি করা হবে।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাকে সরকার দুই ভাগে ভাগ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার চার দিনের মাথায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১২ ও ১৩ আগস্ট বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)–সহ কয়েকটি দল ও জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।

প্রথম দফার এই আলোচনায় কিছু দল ও জোট বাদ পড়েছে। আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টায় এসব দলের মধ্যে এলডিপি, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোটের (এই জোট বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল) সঙ্গে পৃথক মতিবিনিময় করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এলডিপি নেতা অলি আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের বেশ কিছু প্রস্তাব লিখিতভাবে দেবেন। তাঁরা নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে চাপ না দিয়ে সংস্কারের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে চান। ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতারাও বলছেন, তাঁরাও সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবেন।

সরকারের একাধিক উপদেষ্টা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রথম দফার এই মতবিনিময় শেষ করে অল্প সময়ের মধ্যে রূপরেখা তৈরির সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা শুরু করবে সরকার। তবে প্রথম দফার আলোচনা শেষ হওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্বিতীয় দফায় মতবিনিময় করেছেন গত বৃহস্পতিবার।

কয়েক দিন ধরে দলীয় কর্মসূচিগুলোয় অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়েও জোর দিচ্ছিলেন তিনি। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব নানা আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন। তিনি এ বিষয়ে ‘এক-এগারো’ হিসেবে পরিচিত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। পরদিনই বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকটি হয়। এতে মির্জা ফখরুলসহ দলটির তিনজন নেতা অংশ নেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও বিএনপির নেতারা দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত সংস্কার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার তাগিদ দিয়েছেন। এ জন্য বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।

তবে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রূপরেখা তৈরির সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সরকার যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা করবে, তখনো বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে সরকারি সূত্রগুলো বলছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সুনির্দিষ্ট কোন কোন বিষয়ে ও কীভাবে সংস্কার করতে চায় এবং সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন হতে পারে, সে ব্যাপারে মানুষের সামনে এখনো পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দেয়নি। সে জন্য সন্দেহ দেখা দিচ্ছে এবং সমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আর এমন পটভূমিতেই একটি রূপরেখা তৈরির তাগিদ আসছে।

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। একজন উপদেষ্টা প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–আন্দোলনের নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে অংশীজন হিসেবে রেখেই সরকার সংস্কারসহ সব বিষয় এগিয়ে নিতে চায় সরকার। এ জন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার এ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের বাদ রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল ও সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।