স্বতঃস্ফূর্ততাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে গণ–অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে গেছে

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাঁর লেখা ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৫ মার্চ
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

স্বতঃস্ফূর্ততাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে গেছে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নিজের লেখা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যাঁরা যেভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাই নিজেদের অভিজ্ঞতা লিখলে একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিভিন্ন সময়ে বিকৃত করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে সেটা যাতে না হয়, সে জন্য স্মৃতি তরতাজা থাকা অবস্থাতেই অভিজ্ঞতাগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

ছাত্র–জনতার সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। গণ-অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর লেখা বই ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। এই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, মাত্র ১২০ পৃষ্ঠায় এই গণ-অভ্যুত্থান তো দূরের কথা, আমার চোখে জুলাই লেখাও সম্ভব নয়। এই বইয়ে আন্দোলনের একটা ছোট বর্ণনা। এটা তিনি লিখেছেন যাতে ভুলে না যান। ভবিষ্যতে সময় পেলে পরবর্তী সংস্করণে হয়তো আরও বিস্তারিত লিখতে পারবেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, জুলাইয়ের ইতিহাস তখনই পরিপূর্ণতা পাবে, যখন সারা দেশের সহস্র সংগঠক ও কর্মীদের সবার পাঠগুলো উঠে আসবে। তাঁর প্রত্যাশা যাঁরা যেভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাই নিজেদের অংশটা লিখবেন, যাতে দুই-তিন বছরের মধ্যে একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়।  

ছাত্র–আন্দোলনের সেই দিনগুলোর বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে আমরা মানুষের কথাগুলোকে আমাদের মুখ দিয়ে বলেছি। অনেকগুলো অনুঘটক ও ঘটনা ছিল, যা এই আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত করেছে। জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার আমাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা যে সহযোগিতা পেয়েছি, কারা সহযোগিতা করেছেন, সেটার একটা সাবলীল বর্ণনা আছে। অন্তত ১০-১৫টা গ্রুপ পেছন থেকে সহযোগিতা করে গেছে। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা চানও না যাদের নামগুলো আমরা নিই। এই বইটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে লেখা। এটা আমার দিক থেকে সম্পূর্ণ গল্প নয়।’

গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব রিফাত রশিদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, বইয়ের লেখক স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা, ১৫ মার্চ
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

আসিফ মাহমুদ বলেন, জুলাই আন্দোলনের অনেকগুলো ফ্রন্ট (ক্ষেত্র) ছিল। এই বিভিন্ন ফ্রন্টগুলোর এগিয়ে আসা আন্দোলনটাকে জীবিত রেখেছে।...অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশকে কাঠামোগত সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তা না হলে কোনো না কোনোভাবে আবারও স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘স্যারকে বইয়ের ভূমিকা লিখে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়েছেন। আমি একটা খসড়া করে দিয়েছিলাম, বইয়ের একটা পাণ্ডুলিপিও স্যারকে দিয়েছিলাম। স্যার সময় নিয়ে নিজের হাতে ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। এত ব্যস্ততার মধ্যেও সহযোগিতা করায় স্যারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

‘রুহানিয়াত’

আসিফ মাহমুদের আন্দোলনের সহযোদ্ধা রিফাত রশিদও (বর্তমানে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব) আন্দোলনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব পূঞ্জীভূত করার আগ্রহ বা ইচ্ছা তাঁদের কারও ছিল না। সবার আগ্রহ ছিল শেখ হাসিনার পতনের দিকে।

আন্দোলনের সময় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রিফাত। আন্দোলনের নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আরও কয়েকজনের (নাম উল্লেখ করেননি) প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

রিফাত বলেন, ১ আগস্ট রাতেই অধ্যাপক ইউনূসকে সরকারপ্রধান করার বিষয়টি তাঁরা ভেবেছিলেন। ২ আগস্ট ঢাকায় ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কর্মসূচির বিষয়ে মেঘমল্লার বসু (ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি) তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে রিফাত আরও বলেন, ‘আমাদের মাথায় ছিল, একবার যদি আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দখল করতে পারি, তাহলে সেই রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তৈরি হবে, যাতে আমরা এক দফা ঘোষণা করতে পারব। আমরা সবাইকে দ্রোহযাত্রায় যেতে বলি। (দ্রোহযাত্রায়) শহীদ মিনার মুক্ত হওয়ার ফলে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের দিকে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাই।’

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে রিফাত রশিদ বলেন, এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে একটা ‘রুহানিয়াত’ (আধ্যাত্মিকতা) ও একটা অভ্যন্তরীণ বন্ধন ছিল বলে বিশ্বাস করেন তিনি। কখন কী করতে হবে, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। ছিন্নমূল যে মানুষেরা রাজপথে ছিলেন, তাঁদের কিছু হারানোর ছিল না।

আরও পড়ুন