বৈশ্বিক সংকটের কারণেই জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সারা বিশ্বেই সংকটের কারণে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম স্থিতিশীলভাবে কমলে দেশে মূল্য সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব  শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ছিলেন তা নয়, সহযোদ্ধাও ছিলেন। আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ সর্বক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান আছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস অন্তরীণ থাকার পরও তিনি আপস করেননি।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে জ্বালানি তেলের দাম ৭০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে জ্বালানি তেলের মূল্য গত বছর বাড়ায়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। অব্যাহতভাবে এমন ভর্তুকি দেওয়া কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। গত তিন মাসে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।’

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরও দেশে জ্বালানির মূল্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূল্যের সমান বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য ১১৪ টাকা, পশ্চিমবঙ্গেও ডিজেলের মূল্য ১১৪-১১৫ টাকা। বাংলাদেশে পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা, পশ্চিম বাংলায় ১৩০-১৩১ টাকা। ডিজেলের দাম নেপালে ১২৮ দশমিক ৬৩ টাকা, ভুটানে ১৪৪ দশমিক ৩৯ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ১১৪ টাকা, ফ্রান্সে ২২৪ টাকা, জার্মানিতে ১৯০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬০ টাকা, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৪৪ টাকা, চীনে ১১৮ দশমিক ৬৩ টাকা, তেল রপ্তানিকারক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডিজেলের দাম ১২২ দশমিক ৮ টাকা, যুক্তরাজ্যে ২৩০ টাকা, সিঙ্গাপুরে ১৮৯ দশমিক ৭৮ টাকা।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জ্বালানিসংকটের কারণে নেওয়া ব্যবস্থার তথ্য তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জ্বালানিসংকটের কারণে সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানি। বিভিন্ন শহরে সড়কবাতি বন্ধ করে দিয়েছে। বাথরুমে গরম পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এরই মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। ভবিষ্যতে আরও ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেবে। জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক মিনিটের জন্যও কখনো বিদ্যুৎ যায়নি, সেখানে লোডশেডিং হচ্ছে, বিদ্যুতের রেশনিং করা হচ্ছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য ২৭ জুলাই থেকে ফ্রান্সে গণজমায়েত স্থল ও বিপণিবিতানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালানোর ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ৭৫০ ইউরো জরিমানা করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। গ্রিস এ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এই গ্রীষ্মকালেও সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতালিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পার্ক, শপিং মলগুলোতে সন্ধ্যা সাতটার পর বাতি নিভিয়ে দেওয়া।

চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, সেটি রক্তের অক্ষরে লেখা। ভারতের সরকার ও জনগণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে সহায়তা করেছে, বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন রক্তের অক্ষরে সেটি লেখা থাকবে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যে উচ্চতায়, সেই সম্পর্কের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের সম্পর্ক তুলনীয় নয়। চীন আমাদের একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ ও একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। বন্ধুপ্রতিম দেশ যেকোনো প্রস্তাব দিতে পারে।’