অন্তর্বর্তী সরকার জন–আকাঙ্ক্ষার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, এই সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা বসে নেই। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মনে হয় তারা জন–আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে চাইছে না; বরং তারা যেটা ভালো মনে করছে, সেটাই হয়তো তারা চাপিয়ে দিতে চাইছে।
শনিবার বিকেলে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন এই সম্মেলনে।
তারেক রহমান আরও বলেন, অনেক অপ্রাপ্তি থাকার পরও জনগণ কিন্তু এখনো এই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, তারা আস্থা হারাতে চাইছে না। তবে একটা প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি আদৌ জনগণের ওপর আস্থা রাখতে চায়? কারণ, জনগণের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্ক নিবিড় থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা ডালপালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ওরা (ষড়যন্ত্রকারীরা) কিন্তু ওত পেতে আছে, কীভাবে সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়া যায়। সেটা দেশের ভেতরে হোক, বাইরে হোক; প্রশাসনের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক; ওরা কিন্তু ওত পেতে আছে। কারণ, এদের ব্যর্থ করে দেওয়া গেলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেওয়া যাবে।
জনমনে প্রশ্ন
অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষতা জনমনে প্রশ্ন তুলবে বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে আহত করে, দুই হাজারের মতো ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে পতিত স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালানোর পর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটি প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মাফিয়া সরকারের প্রায় ১৫ বছরের তৈরি করা জঞ্জাল তিন মাসে দূর করা সম্ভব নয়। তবে তিন মাস পর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অন্যায্য কিংবা অস্বাভাবিকও নয়।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বিষয়ে মনে রাখা দরকার যে জনগণের সব দাবি হয়তো তাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার পরিচালনায় যদি অদক্ষতা পরিলক্ষিত হয় বা জনগণ দেখতে পায়, সেটাও কিন্তু জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র মেরামতের কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার নির্ধারণে যদি ভুল হয়, সেটি জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে। জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান, সেখানে আমরা দেখেছি বহু মানুষ, ছাত্র, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের হাত, পা, কান, চোখসহ অনেক অঙ্গহানি হয়েছে। এখন আহত ব্যক্তিরা যেভাবে হাসপাতাল থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন, এটা সমগ্র দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর দৃশ্য।’
তারেক রহমান প্রশ্ন তোলেন, স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে যে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, নিরাপত্তা কেন অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারে নেই বা সেটা কত নম্বরে ছিল। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা সরকারের অগ্রাধিকারের কত নম্বরে আছে?
‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার ভোটের অধিকার’
জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, জনগণের এই দুই ক্ষমতায়ন যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সংস্কার—কোনোটাই টেকসই হবে না। তিনি বলেন, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ভোট প্রয়োগের অধিকার। জনগণ ভোট প্রয়োগের সুযোগ যদি না পায়, তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের অংশীদারত্বের যে সম্পর্ক, সেটা সৃষ্টি হয় না।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করে, তারা একটা নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ পরিবেশে, নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে।
‘একটি দেশের রাজনীতি রুগ্ণ হলে সে দেশের অর্থনীতিও রুগ্ণ হতে বাধ্য’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী আমলে আমরা দেখেছি, কীভাবে উন্নয়নের নামে মেগা প্রজেক্ট করেছে তারা। সেটি কিন্তু প্রকৃত উন্নয়নের চিত্র নয়। এখন ধীরে ধীরে আসল চিত্র বেরিয়ে আসছে সর্বক্ষেত্রে। বাংলাদেশই কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রমাণ, একটি দেশের রাজনীতি রুগ্ণ হলে সে দেশের অর্থনীতিও কীভাবে রুগ্ণ হয়ে যায়।’
‘দ্রুত নির্বাচন করতে হবে’
‘আজকে আমরা খুব জটিল একটি সময় পার করছি’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সতর্কতার মধ্য দিয়ে এই সময়টা আমাদের পার করতে হবে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের আকাঙ্ক্ষা হলো বিরাজমান সমস্যাগুলো দূর করে খুব দ্রুত নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার দ্রুত করতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন করতে হবে। তার চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।’
জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম প্রমুখ। সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে ফখরুল আলম ও রুহুল আমিন আকন্দ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।