একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের জাঁতাকলে দেশের মানুষ: সিপিবি
দেশের মানুষ এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের জাঁতাকলে বলে মন্তব৵ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এ অবস্থা বহাল রেখে কোনো সংগ্রামকে অগ্রসর করা, বিজয় অর্জন করা যাবে না। এ অবস্থা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে নতুন ধারার সংগ্রামের সূচনা করতে হবে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় দলের নেতারা এসব কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। আজ সিপিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় এবং নির্বাচন পর্যালোচনা–বিষয়ক প্রতিবেদন উত্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও পরিকল্পনা উত্থাপন করেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।
সভায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার, প্রহসনের ‘ডামি’ নির্বাচন বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, খেলাপি ঋণ ও বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার, দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, খেতমজুরসহ সবার কাজের নিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধসহ দেশের অর্থনৈতিক ও জনজীবনের সংকট দূর করার দাবিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সিপিবির নেতারা বলেন, বাংলাদেশের চলমান সংকট এক দিনে হয়নি। পালাক্রমে ক্ষমতায় থাকা শাসকগোষ্ঠী এ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শুধু দলতন্ত্র নয়, পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্রের বিস্তার করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। পুঁজিবাদী লুটপাটতন্ত্র দেশকে আজ অবাধ লুটপাটের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
সভায় আরও বলা হয়, বর্তমান এ অবস্থা বহাল থাকলে একদলীয়, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী, দুঃশাসন আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এর বিপরীতে জঙ্গিবাদ, চরম পন্থা, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্রের মডেল সম্পর্কে সরকারপ্রধান ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই একাধিকবার বলেছেন, গণতন্ত্র একেক দেশে একেক রকম। এ কথার মধ্য দিয়ে নতুন ধারার একদলীয় শাসনের ইঙ্গিত প্রকাশিত হয়েছে।
সভায় বলা হয়, ভূরাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নেওয়াকে সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী শক্তি নির্বাচন ঘিরে ভূমিকা নিয়ে চলেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ আরেক সংকটে পড়তে পারে।
সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাজেদুল হক রুবেল। আরও বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, এ এন রাশেদা, লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও মোতালেব মোল্লা, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য এম এ সাঈদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ফজলুর রহমান প্রমুখ।