সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং আপনাদের সহকর্মী সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের কলকাতায় খুনের ঘটনার পর তাঁর বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনাগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি এ ব্যাপারে ভীষণ নির্বিকার। আপনি যদি করলা মুখে দেন, সেটা তিতা হবে। ল্যাংড়া আম মুখে দিলে সেটা মিষ্টি লাগবে। রাষ্ট্রব্যবস্থাও এ রকমই। আমরা রাষ্ট্র গড়তে গিয়ে যে ব্যবস্থাটা নিয়েছি, এটা তারই ফল। এটাও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরিণাম, জিয়াউর রহমান যে বলেছিলেন, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ এটা তারই একটি বিকশিত রূপ। আমরা যে অর্থব্যবস্থার মধ্যে আছি, সেখানে শক্তি যার, অর্থ তার।
আজিজ আহমেদ, বেনজীর আহমেদ—এরা দুই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। অতএব শক্তি ছিল তাঁদের। শক্তির অপব্যবহার হলেই তা অপশক্তি হয়ে যায়। আর অপশক্তি তো সবকিছু নিজের করতে চাইবে। এই দুজনের কার্যকলাপ যেগুলো পত্রপত্রিকায় দেখি ও টেলিভিশন টক শোতে শুনতে পাই, সেটাই হয়েছে। এরা বেশি আগ্রাসী ছিল, তাই বেশি পরিমাণ দেখা যাচ্ছে। যারা চিত্তে দুর্বল কিন্তু স্বার্থবাদী তারাও কিন্তু কম না।
এটা যে হলো এর পেছনে কী কারণ?
লতিফ সিদ্দিকী: যে ব্যবস্থায় রাষ্ট্র শাসন হচ্ছে, এটাই হবে। এ নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু দেখি না। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক, প্রধানমন্ত্রী। তিনি চাইলেই কি সবকিছু করতে পারবেন? তিনি যতই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান করতে চান, তিনি যদি সেনাপ্রধানকে দুর্নীতির দায়ে অপসারণ করেন, সেনাবাহিনী যদি ক্ষিপ্ত হয়, তাহলে কি আপনারা এগিয়ে আসবেন? বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কি কেউ এগিয়ে এসেছিলেন? ওয়ান–ইলেভেন হওয়ার পর কি জনগণ এগিয়ে এসেছিলেন? তাই শেখ হাসিনা বুঝলেও সবটা করতে পারছেন না। তিনি চেষ্টা করছেন মাত্র। উন্নয়ন করলে দুর্নীতি হবে, সেটাই হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বেনজীর, আজিজ আর তৃতীয় ব্যক্তি। আমি মৃত ব্যক্তি (আনোয়ারুল আজীম) সম্পর্কে বলছি না। তবে সন্ত্রাসীরাই কিন্তু রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ রকম সংসদ সদস্য অনেক দলেই আছে। তাই বেনজীর নয়, আজিজ নয়, আনোয়ারুল নয়, সিস্টেম এর জন্য দায়ী। সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে।
এখানে জাতীয় সংসদের কিছু করণীয় আছে?
লতিফ সিদ্দিকী: জাতীয় সংসদই তো একটা রাষ্ট্রের মূল কেন্দ্র। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই তো সবকিছু করবেন। কিন্তু মজা হলো আইন প্রণয়ন হয়, এটা মূলত আমলারা করে। অবশ্যই আমি এ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
এ ঘটনাগুলো নিয়ে সরকারের ভূমিকা কীভাবে দেখেন?
লতিফ সিদ্দিকী: সবটাই তো সরকারের ভূমিকা। যে মন্ত্রীই বলুন, সবাই কিন্তু বলে শেখ হাসিনার নির্দেশনা। সবটাই শেখ হাসিনার নির্দেশে। খারাপটাও কিন্তু শেখ হাসিনার ঘাড়ে আসবে। তবে আমি মনে করি, যখনই তাঁর নজরে এসেছে, তখনই তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।