আগামী নির্বাচন ঘিরে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন। অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ সাংগঠনিক জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ কথা বলেন।
এই ষড়যন্ত্র উপড়ে ফেলতে নেতা-কর্মীদের ধৈর্যের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাইলে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। চলনে–বলনে, কথাবার্তায় দিন শেষে বিএনপিকে মানুষের আস্থায় থাকতে হবে। ভোটাররা ঠিক করবে কাকে ভোট দেবে। আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনাদের।’
২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ জাতির সামনে উপস্থাপন করেন। বিএনপি বলেছে, ‘দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ২৭ দফা কর্মসূচির আলোকে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ দফা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ (সমন্বিত রাষ্ট্রসত্তা) প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় সমন্বয় কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়সীমা নির্ধারণ। বিএনপি সংস্কার প্রস্তাবে আইন সভায় উচ্চকক্ষের প্রবর্তন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে।
৩১ দফা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে নেতা-কর্মীদের যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি দেশ পরিচালনা করতে চায় জনগণের সমর্থন নিয়ে। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই ক্ষমতার উৎস।
চট্টগ্রামের বেশ কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের কিছু সহকর্মীর মনে কিছু অদ্ভুত অনুভূতি জন্মেছে। সেটি হলো, আপনাদের আচরণে মনে হচ্ছে, আমরা সরকার গঠন করেছি। বাস্তবে কিন্তু আমরা সরকার গঠন করিনি; আমরা এখনো বিরোধী দলে। বর্তমানে ক্ষমতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের যেসব সহকর্মীর ভুল উপলব্ধি ও বিভিন্ন আচরণের কারণে দলের ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাঁদের প্রতি আমার কঠোর নির্দেশনা হলো, কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা মেনে নেওয়া হবে না।’
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘১৫-১৬ বছর অনেক অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। মিথ্যা মামলারও আসামি হয়েছেন। ছোট ছোট ভুলের জন্য এই অর্জন যাতে নষ্ট হয়ে না যায়। এলাকায় আপনারা একেকজন বিএনপির প্রতিনিধি। প্রত্যেক মানুষ বিএনপি মানে চেনে আপনাদের। মানুষের নেতিবাচক ধারণা যাতে না হয়। এমন কিছু করবেন না, যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই দিন পর কোন মুখে ভোট চাইবেন। ডামি, নিশি রাত ও ব্যালট চুরির নির্বাচনে বিএনপি বিশ্বাস করে না। নির্ভয়ে, লাইনে দাঁড়িয়ে লোকজন যাতে ভোট দিতে পারে।’
বক্তব্য শুরুর আগে কর্মশালায় অংশ নেওয়া কিছু নেতা–কর্মী তারেক রহমানকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন প্রাইভেট সংস্থার মাধ্যমে দেশের টাকা ফিরিয়ে আনা হবে বিএনপি সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে।
আজ দিনব্যাপী কর্মশালায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ, তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ ও মীর হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান।
কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ সাংগঠনিক জেলার ৮৫৯ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় বান্দরবান জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক উম্যাসিং মার্মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ৩১ দফার প্রচারণা চালাব।’