ফরমায়েশি রায় দিয়ে সাজা দেওয়া হচ্ছে: মির্জা ফখরুল
দেশে যাঁরাই গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছেন, তাঁদেরই মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা ও ফরমায়েশি রায় দিয়ে সাজা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকার মনে করেছে সাজা দিয়ে বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো, চেষ্টা করেও কোনো দিন ধ্বংস করা যাবে না।
রাজধানীর নয়াপল্টনে সোমবার বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবি এবং সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে হাজারো নেতা–কর্মী অংশ নেন। সমাবেশের কারণে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কের এক পাশে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। অন্য পাশের সড়কেও যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। এর ফলে নয়াপল্টনের আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ভেবেছিল খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে গেলে বিএনপি আর থাকবে না। কিন্তু বিএনপি আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। বিএনপি এখন জেগে উঠেছে এবং সরকারের পতনের জন্য মরণপণ আন্দোলন শুরু করেছে। এই স্বৈরাচারী সরকারকে পতন না করা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সৈনিকেরা কেউ ক্ষান্ত হবে না।’
আওয়ামী লীগ এখন কিছুসংখ্যক আমলা, কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং কিছু লুটেরা ব্যবসায়ীর প্রতিনিধিত্ব করে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ এখন জনবিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যেসব চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, সবই দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তখন তিনি কিন্তু (খালেদা জিয়া) জনগণের কথা চিন্তা করে, মেনে নিয়ে নতুন সংসদ গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করে দিয়ে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে নেই—আওয়ামী এখন এমন কথা বললেও দলটি কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিল, সে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সরকারের প্রধান সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, সেই বক্তব্য তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার আবারও একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। যদি তাই হয়, তাহলে বিএনপি নেতাদের কারও কারও ঠিকানা জেলখানা অথবা ইলিয়াস আলীর (২০১২ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা) মতো হবে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান; ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, শামসুজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম। সঞ্চালক ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব লিটন মাহমুদ। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের জাতীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।