মন্ত্রী ও এমপিরা ভোটে প্রভাব ফেলতে পারেন 

নির্বাচন কমিশন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারপরও এই নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময় সভায়। 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) তাঁদের বক্তব্যে ভোটের মাঠে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন-এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। 

নির্বাচনে কোথাও কোথাও সংঘাত হতে পারে-এমন আশঙ্কার কথাও বলেছেন মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা। 

এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়েছে। আর চতুর্থ ধাপের ভোট হবে আগামী ৫ জুন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা এই নির্বাচনে প্রচার বা কোনো ধরনের নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু দেশের বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের (এমপি) অনেকেই নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। এবারও এমন ঘটনা ঘটবে বলে ডিসি ও এসপিদের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। কারণ, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বেই মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কয়েকজন নিকটাত্মীয় প্রার্থী হয়েছেন। আবার দলীয় প্রার্থী না থাকলেও কমবেশি সব সংসদ সদস্যের নিজের পছন্দের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কেউ কেউ নির্বাচনী এলাকায় নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছেন-এমন অভিযোগের কথা কেউ সভায় বলেননি। তবে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মন্ত্রীরা নির্বাচনী এলাকায় থাকলে একধরনের প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। 
ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম

ইসির একাধিক সূত্র জানায়, গতকালের সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে উঠে আসে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ভোটের পর একধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হয়। ভোটের পর তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়। এ সময় একজন নির্বাচন কমিশনারও এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। 

সূত্র জানায়, কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিএনপির নির্বাচনে না থাকার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এ ছাড়া নির্বাচনে কোথাও কোথাও সংঘাত হতে পারে-এমন আশঙ্কার কথাও বলেছেন মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা। 

ইসি সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। সংসদ সদস্যরা যাতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলেন, সে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দেওয়া হতে পারে।

ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছেন-এমন অভিযোগের কথা কেউ সভায় বলেননি। তবে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মন্ত্রীরা নির্বাচনী এলাকায় থাকলে একধরনের প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। 

আরও পড়ুন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে গতকালের সভায় নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান অংশ নেন। এ ছাড়া ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি (উপমহাপুলিশ পরিদর্শক), ৬৪ জেলার ডিসি ও এসপি এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন। 

সভার শুরুতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দেশের নির্বাচন নিয়ে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত গতকালের মতবিনিময় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়। 

সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে, তাই প্রতিযোগিতা বেশি হয়। এ জন্য নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সহিংসতার আশঙ্কা না থাকলে কোথাও কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আচরণবিধি যাতে সবাই যথাযথভাবে মানে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁরা (প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা) অনুরোধ করেছেন। কমিশনও তাঁদের আশ্বস্ত করেছে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবে।