‘সরকারের দাম কমছে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে’
সরকারের দাম কমছে বলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, চুরি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভুল নীতির কারণে পানি, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়ছে। সরকারের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছেন জনগণ।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় কর্মসূচি হিসেবে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশে সাইফুল হক এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে লোকদেখানো গণশুনানি হতো, এখন সেটাও হচ্ছে না। এই সরকার বিদায় নেবে, কিন্তু আইএমএফের ঋণ জনগণের গলার ফাঁস হিসেবে রয়ে যাবে। গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করছে, উসকানি দেওয়া হচ্ছে। সরকার বিশাল আতঙ্কে আছে। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধদের সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে। তবে গত নির্বাচনের মতো লোকদেখানো ও তামাশার সংলাপে বিরোধী দল যাবে না।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দুর্নীতি, ভুল নীতি ও অনিয়মের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। টেকসই ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার বদলে সরকার আমদানিনির্ভর নীতি নিয়েছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধকে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। নিজেদের সরকারের ভুলের দায় জনগণের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
সমাবেশ থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দীন মাহমুদ পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেন। ২৫ জানুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের আজকের সমাবেশে অংশ নেয়নি গণ অধিকার পরিষদ। অসুস্থতার কারণে সমাবেশে আসেননি গণতন্ত্র মঞ্চের দুই শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ পূর্বঘোষিত ১০ দফা দাবির সঙ্গে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভ সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার না করে অন্য যেকোনো সংস্কার মূলত দুর্নীতিকে সহযোগিতা করছে। তাই আমরা দাবি করছি এই সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
গত ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপির নেতৃত্বে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১২ দল এবং ১১-দলীয় জোটও রয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি গণ-অবস্থান ছিল যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি। বিরোধী দলগুলোর ওই দুই কর্মসূচিতে ঢাকায় পাল্টা সমাবেশ করে শক্তি দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ।