আলমডাঙ্গার ১৩ ইউপি
৩০ ‘বিদ্রোহী’ নিয়ে বিব্রত আ.লীগ
১৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপির ৬, জামায়াতের ৫ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৬ নেতা ভোটের লড়াইয়ে আছেন।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগেরই মনোনীত প্রার্থী ১৩ জন এবং ‘বিদ্রোহী’ আছেন ৩০ জন।
ক্ষমতাসীন দলে এমন প্রার্থীজট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দলের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। তাঁরা হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। নেতাদের কথা শুনছেন না কেউ। বিদ্রোহীদের কাছে অনেকটাই অসহায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃত্ব।
এই ১৩ ইউপিতে বিএনপির ৬ ও জামায়াতের ৫ নেতা স্বতন্ত্র পরিচয়ে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৬ নেতা দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে আলমডাঙ্গার ১৩টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ১৩ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থী ৪৩ জন।
বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনাকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস। তিনি বলেন, দলের বিদ্রোহীদের কারণে দামুড়হুদা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নির্বাচিত করা সম্ভব হয়নি।
আসাদুলের দাবি, মনোনয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় পরীক্ষিত নেতারা একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েকজন নেতার খামখেয়ালির কারণে আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১ থেকে ৫ জন পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন থেকে চারবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের অনেক জনপ্রিয় নেতাকে মনোনয়ন না দিয়ে স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন কারণে তুলনামূলক দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কাওসার আহমেদ বাবলু। কাওসার আহমেদ আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুবারের নির্বাচিত এই চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নাহিদ হাসান ওরফে সোহাগকে।
কাওসার আহমেদ দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। নৌকা বাদ দিয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আইয়ুব হোসেনের পক্ষে কাজ করতে নেতা চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি শুনিনি। আমি নেতৃত্ব দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে এই ইউনিয়নে জিতিয়ে এনেছিলাম। যার প্রতিশোধ হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমনকি নামটি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়নি।’
বেলগাছি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চারজনই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের। বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম ওরফে মন্টুকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সমীর কুমার দে। টানা তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামসহ তিনজন এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমিরুলের প্রতীক মোটরসাইকেল। এ ছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান চঞ্চল আনারস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম গোলাম সরোয়ার ওরফে শামীম ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
খাদিমপুর ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল হালিমও বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সদস্য এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এই ইউনিয়নে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাহিদুর রহমান জোয়ার্দ্দার ওরফে লোটাসকে। আবদুল হালিমের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতি করে তাঁকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী অস্বস্তিতে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেন, দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। এমনকি অর্থ ও জনবল দিয়ে সহযোগিতা করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারাতে তাঁরা উঠেপড়ে লেগেছেন। অনেকেই বলছেন, সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই উপজেলায় যেমন কায়দা করে নৌকা প্রতীককে হারানো হয়েছিল, এবার একাধিক ইউনিয়নে একই চর্চা চলছে।
হারদী ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. নুরুল ইসলাম। দুবার নির্বাচিত এই চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হারদী ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সরাসরি মদদ দিচ্ছেন। দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নৌকার বিপক্ষে কাজ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘দলের ভেতরে এই বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘটনায় আমি বিব্রত। বিদ্রোহীদের কারা কীভাবে মদদ দিচ্ছে, আমার জানা নেই। তবে ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করব।’