২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শাল্লায় বিএনপির প্রতিনিধিরা দুষলেন আ.লীগকে

শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় নোয়াগাঁও গ্রামটি পরিদর্শন করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধিদল। এই গ্রামেই গত বুধবার সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

আজ শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে ঢাকা থেকে আসা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরমের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী সেখানে যান। তাঁরা ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরবাড়ি ঘুরে দেখেন এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।

সেখানে নিতাই রায় চৌধুরী সমবেত লোকজনের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন বাড়ে। এটা সব সময় হয়। দলের মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হওয়া সত্ত্বেও প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ সরকারের আমলে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর, টাঙ্গাইলে ও নাসিরনগরে এসব ঘটনা ঘটেছে। বড়াইগ্রামে একজন খ্রিষ্টান পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছে। আর জমিজমা, বাড়িঘর দখল তো আছেই। এসব ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ জড়িত। এখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে।

নিতাই রায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, এটা জনগণের সরকার নয়। ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের সরকার হয়। অবৈধ, দুর্বল সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বলপ্রয়োগ করে। এ কারণে নোয়াগাঁওয়ের মতো ঘটনা ঘটে। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকলে এসব ঘটনা ঘটত না।

বিএনপির প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নোয়াগাঁওয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ দলের অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে জেলা বিএনিপর পক্ষ থেকে গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা এবং বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের পক্ষ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়।

নোয়াগাঁও গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে গত বুধবার সকালে পার্শ্ববর্তী চারটি গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে ৯০টি ঘরবাড়ি ও মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলাকারীরা এ সময় লুটপাট চালান। ঘরের জিনিসপত্র ও টাকাপয়সা নিয়ে যান। খবর পেয়ে প্রশাসন ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় শাল্লা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৩০ জনকে।

পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিরাই উপজেলা শহরে আয়োজিত এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। পরে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে নিজের ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাসের (২৮) বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে নোয়াগাঁও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে মঙ্গলবার রাতে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীই ঝুমনকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। বুধবার সকালে আশপাশের শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডীপুর গ্রামের মানুষ লাটিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশের ধারাইন নদের তীরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে দিয়ে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালান।