জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্। মো. মুরাদ হাসানের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ এবং পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্র সঙ্গে।
প্রথম আলো: জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে মো. মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থান কী?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: মো. মুরাদ হাসানকে ২০১৫ সালের সম্মেলনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। সে মেধাবী ছেলে, চিকিৎসক। তার বাবার সঙ্গে আমি রাজনীতি করেছি। হঠাৎ করে তার এমন অবস্থা কেমন করে হলো, তা বুঝতে পারছি না। তথ্যমন্ত্রী মহোদয় (হাছান মাহমুদ) গতকাল মন্তব্য করেছেন, তিন মাস ধরে মুরাদ হাসানকে অসুস্থ মনে হয়েছে। আমার মনে হয়, সেটাই কারণ। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, তার চিকিৎসার দরকার। এটাও বলেছেন যে মন্ত্রণালয়ের কাজে তথ্যমন্ত্রীকে এবং মন্ত্রণালয়ের সবাইকে পূর্ণ সহযোগিতা করত সে। এখন কী থেকে কী হয়ে গেল! অসংলগ্ন বক্তব্য ও অতিকথন, মাত্রাতিরিক্ত আবেগ প্রদর্শন, শরীরের ভাষা—সবকিছু মিলিয়ে একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি তার। আর তার কারণে আওয়ামী লীগকে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম আলো: মুরাদ হাসানের এসব আচরণ নিয়ে আপনারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন কখনো?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: না, সরাসরি কিছু বলা হয়নি কখনো। এসব বিষয় আগে তার মধ্যে এভাবে দেখা যায়নি। তার বাবার সঙ্গে আমি রাজনীতি করেছি। তার বাবা মতিউর রহমান তালুকদার যখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, তখন আমি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে। তাকে আমি স্নেহের দৃষ্টিতেই দেখি। বয়স কম। অল্প বয়সে এমপি হয়েছে, প্রতিমন্ত্রী হয়েছে। আমরা তাকে আদর করতাম, এখনো করি। তার প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। আমরা নিজেরা দুঃখ পাচ্ছি। ছেলেটা ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে গেল। সামনে তার অনেক কিছু দেওয়ার ছিল।
প্রথম আলো: মুরাদ হাসানকে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কতটুকু?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: আওয়ামী লীগ একটা মহাসমুদ্রের মতো। এই আওয়ামী লীগে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই অপরিহার্য। আমরা সবাই প্রসঙ্গক্রমে আসি। আমরা যারা আছি, তারা ঘটনাক্রমে পার্টি থেকে যদি খসেও যাই, দলের কোনো ক্ষতি হবে না। এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবেই বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল যেমন সুসংগঠিত, বাংলাদেশ রাষ্ট্রও আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। বাংলাদেশ আজ তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বের বিস্ময়। সে ক্ষেত্রে মুরাদ হাসানের মতো একজন প্রতিমন্ত্রী যদি দল থেকে ছিটকে পড়ে বা বিচ্যুত হয়, তাহলে আমার মনে হয় না আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি হবে।
প্রথম আলো: মুরাদ হাসানের পদত্যাগের খবরে তাঁর এলাকা সরিষাবাড়ীতে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করে মিছিল করেছেন। কেন?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। আমাদের জেলায় ২৬ লাখ মানুষ। সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ কাগজে-কলমে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের ১০টি সহযোগী সংগঠন। ৭ হাজার ৩৩১টি কমিটি। গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা উপজেলা এবং জেলার কমিটি আছে এসব সংগঠনের। আমাদের এতগুলো লোক, সবারই পক্ষ-বিপক্ষ আছে। আমি সভাপতি আছি, নিশ্চয়ই আমারও সমালোচক আছে। কিছু লোক থাকে বঞ্চিত। কিছু লোক থাকে, যাদের অপরের দুঃখ দেখলে আনন্দ লাগে। মুরাদ হাসান যে এলাকার সাংসদ, সেটা বিএনপির সাবেক মহাসচিব সালাম তালুকদারের এলাকা। সে এলাকায় স্বভাবতই বিএনপির লোকজন আছে। তাদের বিরোধিতাও আছে।
প্রথম আলো: তাহলে এলাকার রাজনীতিতে মুরাদ হাসানের এই ঘটনার কারণে আওয়ামী লীগ সমস্যায় পড়বে না?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: মুরাদ হাসান যে এলাকার সাংসদ, সেখানে বাইরে থেকে কোনো লোককে এনে মনোনয়ন দিলেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোট পাবেন। এর কারণ হলো আমাদের বিপুল সমর্থক আছে। জনগণ আওয়ামী লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আছে। সেখানে আমি বা একজন মুরাদ হাসানের থাকা না থাকায় কোনো সমস্যা হবে না।
প্রথম আলো: মুরাদ হাসানের এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি কতটুকু লাভবান হবে?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: বিএনপির এতে কোনো লাভ হবে না। এই রাজনৈতিক দলটি একটি কাগজের বাঘ। তাদের কোনো রাজনৈতিক দর্শন, কর্মসূচি নেই। তাদের চিন্তা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য এবং তারেক রহমানের দেশে আগমন নিয়ে। এটা এখন পারিবারিক দলে পরিণত হয়েছে। জনগণের কোনো কর্মসূচি নেই। আওয়ামী লীগ জনগণের পালস বুঝতে পারে বলেই ৭২ বছরের দলটি ২০ বছরের তরুণের মতো এগিয়ে চলেছে। তাই এ ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক লাভ হবে না বিএনপির।
প্রথম আলো: এক মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুই তরুণ নেতা দল ও পদ থেকে বহিষ্কৃত হলেন। প্রথমে গাজীপুর সিটির মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, পরে মুরাদ হাসান। এর প্রভাব মাঠপর্যায়ে কেমন হবে?
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: মাঠপর্যায়ে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা আমাদের সবার জন্য একটি বার্তা। বার্তাটি হলো, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী যত বড় বা কেন্দ্র ও প্রান্তের যে নেতাই হোক না কেন, তাঁকে মাপ করার কোনো সুযোগ নেই। অত্যন্ত প্রখর দৃষ্টি আমাদের নেত্রীর। তাঁর সিসিটিভির মধ্যে আমরা সবাই আছি। আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা এমন কিছু যেন না করি, যাতে দলের, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ক্ষতি হয়; নির্বাচনী ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বার্তাই গেছে সবার কাছে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্: আপনাকেও ধন্যবাদ।