মুক্তাদিরের নিয়ন্ত্রণ ছোটাতে চান আরিফুল
সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি পদে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা দলে নানা আলোচনা ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মতে, সিলেট বিএনপিতে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণ ভাঙা এবং দলের নেতৃত্বে আবার ফেরার লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়ে নেমেছেন আরিফুল হক।
আগামীকাল সোমবার সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন। জেলার ১৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের ১ হাজার ৮১৮ জন কাউন্সিলর সম্মেলনে সরাসরি ভোট দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।
সম্মেলনে সভাপতি পদে তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে প্রার্থী হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীরা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. আবদুল মান্নান, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল হাসান ও আ ফ ম কামাল। আর সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন মো. লোকমান আহমদ, এম মুজিবুর রহমান, শাকিল মোর্শেদ ও মো. শামীম আহমদ।
এর মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি মূলত সভাপতি পদের দিকে। এ পদে আলোচনায় আছেন আরিফুল হক ও আবুল কাহের। আবুল কাহের বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নিয়ন্ত্রণ মুক্তাদির ও তাঁর অনুসারীদের হাতে। মূলত এ নিয়ন্ত্রণ ছোটাতেই জেলা কমিটির সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন একসময়কার জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে থাকা আরিফুল হক। ফলে মুক্তাদির সমর্থকদের হিসাব-নিকাশ অনেকটা জটিল হয়ে উঠেছে।
আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেট বিএনপির সবকিছু এক ব্যক্তির পছন্দে একপেশে হয়ে যাচ্ছে। দলকে আরও জনসম্পৃক্ত করতে এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করতে আমি প্রার্থী হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া আমার নিজেরও একটা পরীক্ষা দরকার। কাউন্সিলে সে পরীক্ষাটা করতে চাচ্ছি।’
একসময় সিলেট বিএনপির একক নেতা ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলীর উত্থানে সিলেট বিএনপিতে দুটি ধারার তৈরি হয়। সাইফুরের মৃত্যু এবং ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পরও এ বিভেদ কাটেনি। বরং নানা উপদল বা গ্রুপ তৈরি হয়ে রেষারেষি আরও বেড়েছে।
আরিফুল হক চৌধুরী ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। পরে দলের পদ হারান। পরে মুক্তি ফেলেও দলে কোণঠাসা ছিলেন। যদিও বিএনপির মনোনয়নে গত দুটি সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির
সদস্য করা হয়।
বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, আরিফুল হক ছিটকে পড়ার পর সিলেট বিএনপিতে ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে সিলেট-১ (সদর) আসনে প্রার্থী করে বিএনপি। এ মুহূর্তে সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ আবদুল মুক্তাদির হাতে। কারণ, দল ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটির বেশির ভাগ নেতা মুক্তাদিরের পছন্দের। ফলে এবারের সম্মেলন আরিফুল হক ও আবদুল মুক্তাদির—দুজনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
খন্দকার আবদুল মুক্তাদির দেশে না থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। আবার
আরিফুল হকের প্রার্থিতা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি আবুল কাহের।
এর আগে ২০১৬ সালে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে আবুল কাহের চৌধুরী সভাপতি, আলী আহমদ সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন পর আগামীকাল সম্মেলন হচ্ছে। এতে সবার দৃষ্টি সভাপতি পদের দিকে। এতে আরিফুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী যতটা আবুল কাহের, তার চেয়ে বেশি মুক্তাদিরের নামই নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে।