বিদিশার পেছনে কারা

বিদিশা সিদ্দিক, জি এম কাদের
ফাইল ছবি

ছেলে এরিককে পুঁজি করে এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের পর এবার তাঁর দল জাতীয় পার্টিতেও (জাপা) ভাগ বসাতে চাইছেন বিদিশা সিদ্দিক। তারই অংশ হিসেবে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার এরিককে দিয়ে দলের শীর্ষ পাঁচটি পদে নতুন নাম ঘোষণা করা হয়—যা জাপার ভেতরে–বাইরে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে বিদিশার এই তৎপরতার নেপথ্যে আর কারা আছেন; সেই আলোচনাও আছে দলে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনীতির এই খেলায় ছেলে শাহতা জারাব এরিক গুটি মাত্র। এর প্রধান খেলোয়াড় তাঁর মা বিদিশা সিদ্দিক। তিনি জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদের সাবেক স্ত্রী। এরশাদের মৃত্যুর পর বিদিশা তাঁর ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন’ ছেলে এরিকের দেখভালের কথা বলে এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়িতে ঢোকেন। যেখান থেকে একসময় তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন।
কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন, রাজনীতির এই মরা মৌসুমে বিদিশার এই প্রচেষ্টা কেন, বা তাঁর পেছনে কে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিদিশা সিদ্দিক গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময় হলে দেখতে পাবেন, রাজনীতি তো একা একা হয় না। আর আমি তো এমনি এমনি নামিনি।’

এরিকের ঘোষিত ‘নতুন কমিটিতে’ জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে করা হয় আজীবন চেয়ারম্যান। এরিকের মা বিদিশা সিদ্দিক ও ভাই রাহগীর আল মাহি সাদকে (সাদ এরশাদ) কো-চেয়ারম্যান এবং এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণার রাতেই জি এম কাদেরকে ফোনে রওশন এরশাদ জানিয়েছেন, তিনি জাপার চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন।

কিন্তু বিদিশার দাবি, রওশন এরশাদের নাম দিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা রাজনীতির নামে প্রতারণা।

যদিও বিদিশার পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত এমন প্রমাণ হাজির করা যায়নি যে রওশন এরশাদ তাঁদের প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছেন।

এ বিষয়ে বিদিশা সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওনার ছেলের (সাদ এরশাদ) সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি, কথা বলছি। এখন অপেক্ষা করি, দেখি। উনি (রওশন এরশাদ) যদি অপারগতা প্রকাশ করেন, তখন আমরা ভিন্ন কৌশল নেব।’
বিদিশা জানান, কমিটি ঘোষণার পর তাঁর সঙ্গে জাপার ভেতরে–বাইরে, এমনকি অন্য দল থেকেও অনেকে যোগাযোগ করছেন। সময় হলেই তাঁরা প্রকাশ্যে আসবেন।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল আয়োজন করে এরিককে দিয়ে ‘নতুন কমিটি’ ঘোষণার নেপথ্যে কারা আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণমাধ্যমের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’

জাপার সূত্র জানায়, বিদিশার এই তৎপরতার পেছনে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কারও কারও ইন্ধন থাকতে পারে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রওশন এরশাদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও ছেলে সাদ এরশাদের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন দলের কোনো কোনো নেতা। এ ছাড়া দলের বাইরে থেকেও একটি মহলের ইন্ধন থাকার গুঞ্জন রয়েছে।

বিদিশা সিদ্দিকের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাপার অন্যতম কো চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে যেকোনো নাগরিক তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা করতে পারেন। এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান কথা বলবেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অতীতেও অনেক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হয়েছে। প্রতিকূলতার মধ্যেও নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
অবশ্য জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছেন না; বরং বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ২০ বছর বয়সী ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন’ এরিকের ঘোষণায় জাপার ‘নতুন কমিটির’ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক নয়, এমন একটি শিশুর ঘোষণায় একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হতে পারে না। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে আইন ও বিভিন্ন নীতিমালা রয়েছে।’

এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার নেতৃত্ব নিয়ে ছোট ভাই জি এম কাদের ও ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়েও দ্বন্দ্ব হয় দুজনের মধ্যে। শেষে দুই পক্ষের সমঝোতায় জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হন। আর রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন।