গন্ডারের চামড়া মোটা (প্রমাণিত)
তামজিদ এবার ক্লাস ফোরে উঠেছে। সে পড়াশোনায় তেমন ভালো নয়। সারা দিন খেলাধুলা আর হাসি–তামাশা করে বেড়ায়। আর সবকিছুতে আছে পণ্ডিতি দেখানোর চেষ্টা। একবার হলো কী শোনো। তামজিদ স্কুলের স্টোররুমে আটকা পড়ে গেল! রুমটা নানান জিনিসে ঠাসা। সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। ঘটনার দিন কী কাজে যেন দপ্তরি হরিপদ স্টোররুমটি খুলেছিলেন। আর সেই ফাঁকে তামজিদ চুপি চুপি ঢুকে পড়ল ঘরটায়। ঘেঁটেঘুটে দেখতে লাগল রাজ্যের জিনিসপত্র। এরই মধ্যে দপ্তরি এসে দরজাটা বন্ধ করে চলে গেলেন!
বিপদ বুঝতে পেরে তামজিদ চিৎকার করল। তারপর কাঁদতে শুরু করল। দরজা ভাঙারও চেষ্টা করল। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। কারণ, ততক্ষণে স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। তামজিদের কপাল ভালো, তাকে পরদিন সকালেই উদ্ধার করা হলো। ততক্ষণে ভয়ে, খিদেয় ওর অবস্থা কাহিল। কিন্তু তাতেও কোনো শিক্ষা হলো না ওর।
কদিন আগের আরেকটা ঘটনা বলি। একদিন ঠিক হলো, তামজিদ ওর মা–বাবার সঙ্গে সাফারি পার্কে ঘুরতে যাবে। আনন্দে রাতে ঘুমই এল না ওর। খুব ভোরে রওনা হলো ওরা। সাফারি পার্কে গিয়েই একটি গাইড বুক নিল তামজিদ। সেটা ধরে ঘুরতে ঘুরতে একসময় সে হাজির হলো অদ্ভুত এক প্রাণীর সামনে। প্রাণীটিকে বইয়ে আর টিভিতে আগেও দেখেছিল সে, নাকে একটা খাড়া শিং, বিশাল শরীর। বুঝতেই পারছ, প্রাণীটির নাম গন্ডার। পাশ থেকে কে যেন বলল, ‘গন্ডারের চামড়া ভীষণ মোটা। গুলি ছুড়লেও কিছুই হয় না।’
তামজিদ ভাবল, এ আবার হয় নাকি? কিন্তু আশপাশে গন্ডারবিশেষজ্ঞ কেউ নেই। তাই সে ঠিক করল, গন্ডার নিয়ে গবেষণা করবে। সেদিন সাফারি পার্কে তামজিদ ঘোরাঘুরি তো করলই, পাশাপাশি থ্রিডি ছবিও দেখল একটি। তারপর দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে আরও খানিকটা ঘোরাঘুরি করতে বেরিয়ে পড়ল। হরিণ, বাঘ, সিংহ, বানর, জেব্রা, পাখি—আরও কত পশুপাখি যে দেখল ও। সব দেখা শেষ করে ফিরে আসার সময় হঠাৎ ওর মা–বাবা আবিষ্কার করলেন, তামজিদ নেই! কোথায় গেল ছেলেটা? মা–বাবা তো খুঁজতে খুঁজতে হয়রান।
ওদিকে তামজিদ কী করছে জানো? পাখির খাঁচার সামনে থেকে লম্বা একটা পালক তুলে নিয়েছে। সেই পালক দিয়ে খাঁচার এ পাশ থেকে কাতুকুতু দিচ্ছে এক গন্ডারকে! কিন্তু কাতুকুতুতে গন্ডার হাসবে কী, বিরক্ত হয়ে শিং বাগিয়ে তামজিদকে তাড়া করল। তামজিদ তো পড়িমরি করে দে দৌড়। আর কী কপাল, সামনেই পড়লেন মা ও বাবা। তারপর কী হলো? তামজিদের দুটি কানই লালে লাল!
সপ্তাহখানেক পরের কথা। তামজিদের বাবা টিভিতে খবর দেখছিলেন। পাশেই খেলছিল তামজিদ। হঠাৎ ও শুনতে পেল, টিভিতে সংবাদপাঠক বলছেন, ‘সাফারি পার্কের একটি গন্ডার অদ্ভুত আচরণ করছে। অনেকেই দাবি করছেন, তাঁরা গন্ডারটিকে হাসতেও দেখেছেন।’
টিভিতে গন্ডারটির ছবিও দেখাচ্ছিল। সব দেখেশুনে তামজিদের মনে পড়ল, দিন সাতেক আগে এই গন্ডারটিকেই কাতুকুতু দিয়েছিল ও। গন্ডারের চামড়া মোটা বলে কাতুকুতু বুঝতে এক সপ্তাহ লেগে গেছে। সেদিন থেকে তামজিদ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে গন্ডারের চামড়া সত্যিই মোটা হয়।
ষষ্ঠ শ্রেণি, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ময়মনসিংহ