একটি মশা কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তার প্রমাণ কয়েক বছর ধরে নগরবাসী উপলব্ধি করছে। জুরাইন, মুরাদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা ডেঙ্গুর জন্য বিখ্যাত। প্রতিবছরই এ রোগ তার চরিত্র পাল্টাচ্ছে। রক্তের জন্য এ সময়ে হাহাকার শুরু হয়। হাসপাতালগুলোয় পা ফেলার জায়গা থাকে না।
ডেঙ্গু তৃতীয় বিশ্বের রোগ। প্রচারের পরিবর্তে আমাদের দেশে এটাকে লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। প্রিন্ট অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোথাও ডেঙ্গু নিয়ে তেমন প্রচার নেই। তথ্য নেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর। ডেঙ্গু থেকে মুক্তির জন্য লোকদেখানো মশা নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর ধোঁয়া দিয়ে সারা এলাকা অন্ধকার করা ছাড়া অন্য কোনো পদক্ষেপ নেই। এ বছর মশা নেই। আছে আগের তুলনায় আরও ভয়াবহ ডেঙ্গু।
প্লাটিলেট বাড়ছে, আবার হঠাৎ কমে যাচ্ছে। রক্ত মিলছে না। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কোথাও সিট খালি নেই। চিকিৎসকদের এক কথা, প্রচুর লিকুইড খেতে হবে। তিনবেলা ভাত খেতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। ডাব, মাল্টার দাম এখন আকাশ স্পর্শের অপেক্ষায়। মানুষ প্রচুর খাবার পাবে কোথায়? প্রতিদিনের রক্ত পরীক্ষা, প্লাটিলেট, সিটভাড়া মানুষকে পথে বসাচ্ছে। মা-বাবার সামনে সন্তান, সন্তানের সামনে মা-বাবার অসুস্থতা, রক্তের জন্য দিশাহারা হয়ে ছোটাছুটি, ঋণে জর্জরিত হওয়া—এসব কি বুঝবেন মাননীয় নগরপিতা?
দুই বছর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদনা সহকারী আবুল কালাম আজাদ বিপ্লব। নব্বই উত্তীর্ণ বৃদ্ধ বাবা, নাবালক দুটি ছেলে, স্ত্রীসহ চারজন মানুষের একটি পরিবার। আয়রোজগারবিহীন সবাই। এ রকম সংসারে যদি ডেঙ্গুর মতো ব্যয়বহুল অসুস্থতা দেখা দেয়, তাহলে জীবন কতটা ভয়াবহ হয়, সেটা কি নগরপিতা বুঝবেন?
ডেঙ্গু সম্পর্কে কোনো সাংবাদিক প্রতিবেদন না করলেই কি ডেঙ্গু নাই হয়ে যাবে?
আমরা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। গবেষণা ও টিকার মাধ্যমে মুক্তি চাই এ রোগ থেকে। তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশ এ রোগে ভুগছে, তাদের এক হয়ে গবেষণার মাধ্যমে টিকা আবিষ্কার করতে হবে। মাননীয় দক্ষিণের মেয়র, জুরাইন ও এর আশপাশের যেসব এলাকার মানুষ বেশি আক্রান্ত, তাদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা সিটি করপোরেশন থেকে করতে হবে। অন্য দেশ হলে বর্তমানে ডেঙ্গুর যে অবস্থা, তাতে নগরপিতা পদত্যাগ করতেন। আমাদের দেশে এ সুযোগ নেই।
নগরপিতা, মানুষের কান্না শোনার জন্য, মানুষের দুর্ভোগ দেখার জন্য আপনি কি জেগে আছেন?
শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
জুরাইন, মুরাদপুর
ঢাকা