যত দিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষ ততই ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে শূন্য থাকছে ভোটকেন্দ্র। কেন্দ্রগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। ৩ লাখ ৫২ হাজার ভোটারের সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রগুলো কেন ফাঁকা থাকবে? কেন উৎসবহীন থাকবে? সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজা দরকার।
রাজনীতি ও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এই আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুল রহমান আতিন। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত, সাবেক সাংসদ শফি চৌধুরী শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলেন। এরপরও ভোটারের উপস্থিতি ছিল না, তাই ফাঁকা মাঠে গোল দেন নৌকার প্রার্থী।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০৭ ভোট। এখন নৌকার প্রার্থী হাবিব পেলেন ৯০ হাজার ৬৪ ভোট। তাহলে ৮০ হাজার ৪৪৩ ভোটার গেলেন কোথায়? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ছিল নিষ্প্রাণ। বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে যখন ছবি তুলছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল নির্বাচন কমিশনের এত আয়োজনের সুফল কোথায়? যে নির্বাচনে লোকজন ভোটই দিতে এল না, সেখানে এত নিরাপত্তা আর কথিত ডামাডোলের কারণই–বা কী?
অতীতে ভোট নামের বিষয়টির প্রতি আগ্রহের কমতি ছিল না সাধারণ মানুষের। বঞ্চিত মানুষ কয়েক বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একধরনের তৃপ্তি পেত। কারণ ভোট দিয়ে ‘অধিকার আদায়’ বলে যে বিষয়টি আছে, সেটি জনগণ আদায় করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেটি এখন অতীত। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি বিষয় পরিষ্কার—ভোটের প্রতি মানুষ আজ অনেকটাই আস্থাহীন। এ আস্থাহীনতার তালিকায় খোদ আওয়ামী লীগও আছে। কারণ আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে, সারা দেশে তাদের গণজোয়ার বইছে। সেই জোয়ারের কিছুই তো সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনে দেখলাম না। ভোটব্যবস্থার প্রতি পুরো আস্থাই কি ঘুচে গেল?
নির্বাচনব্যবস্থা যেভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, তাতে দায় এড়াতে পারে না ক্ষমতাসীন দল। ফলে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। ভোটের উৎসবে সাধারণ মানুষকে অংশীদার করতে হবে।
মো. কামরুল ইসলাম
গণমাধ্যমকর্মী, সিলেট