আমাদের সমাজের একটি প্রচলিত উক্তি হলো, মেয়ের বাপদের নাকি মাথা নিচু করে চলতে হয়। এখানে মেয়ের বাপ বলতে সাধারণত ছেলে সন্তান নেই এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়ে থাকে। ছেলেসন্তান ছাড়া এক বা একাধিক মেয়ে থাকার জন্য তাঁদের সমাজের নানা কথার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে শহুরে আধুনিক সমাজের চেয়ে বর্তমান পিছিয়ে থাকা গ্রামীণ সমাজে এর প্রভাব বেশি লক্ষণীয়, যা কন্যাসন্তানদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ ও নেতিবাচক ধারণার উন্মেষ ঘটায়।
অথচ এই কন্যাসন্তানেরাই আগামীর মমতাময়ী মা, ভবিষ্যতের প্রেরণাদানকারী সহধর্মিণী। তবু অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে কিংবা একাধিক কন্যাসন্তান জন্মদানকারী দম্পতি এবং তাঁদের স্বজনদের ভারাক্রান্ত হতে দেখা যায়। অনেক সময় একটি পুত্রসন্তানের আশায় তাঁরা উচ্চ জন্মহারের দিকে ধাবিত হন। অর্থাৎ, সব দিক থেকে কন্যাশিশুর জন্মকে কিছুটা অবহেলার চোখে দেখা হয়। ফলে মেয়েদের বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ, এ ধরনের মনোভাব আমাদের সমাজে এখনো বিদ্যমান।
সমাজে ছেলেদের উচ্চশিক্ষিত করার ক্ষেত্রে যে আগ্রহ ও প্রচেষ্টা দেখা যায়, মেয়েদের বেলায় তা একেবারেই নগণ্য। অথচ আজকে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ছেলেদের মতো মেয়েরাও কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। যদি কন্যাসন্তানকেও ছেলেসন্তানের মতো গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ শিক্ষা ও উপযুক্ত পরিবেশে মানুষের মতো মানুষ করা যায়, তবে ব্যক্তি যে স্বপ্ন নিয়ে ছেলেসন্তান কামনা করেন, কন্যাসন্তানকে দিয়েও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তাই ছেলেসন্তান জন্ম না নিয়ে মেয়েসন্তান জন্ম নিলে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কেননা, প্রতিটি সন্তানই বাবা-মায়ের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার, তা ছেলে কিংবা মেয়ে, যা-ই হোক না কেন। সুতরাং, আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক সন্তানের ভিত্তিতে, ছেলে কিংবা মেয়ের ভিত্তিতে নয়।
* মুহাম্মদ আবু হানিফ: চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।