করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর প্রায় সব ধরনের চাকরির পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এখন অনেক পরীক্ষা একই দিনে একই সময়ে হওয়াতে আমরা আসলেই বিপদে পড়েছি। কোনটা রেখে কোনটার পরীক্ষা দেব। এতগুলো টাকা দিয়ে আবেদন করেও সব পরীক্ষা দিতে পারছি না—এর থেকে বেশি কষ্ট একজন বেকারের আর কী হতে পারে। নিম্নোক্ত দুটি পরিবর্তনের ফলেই সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করি।
১. সমন্বয়: যেহেতু অসংখ্য নিয়োগ পরীক্ষার জট লেগে আছে, তাই তাড়াতাড়ি পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর উপায় নেই। কিন্তু আমরা যারা টাকা দিয়ে আবেদন করেছি, তারা যেন সব পরীক্ষা দিতে পারি, সেটাতেও তাদের নজর দেওয়া উচিত। তাই এ ক্ষেত্রে সমন্বয় হওয়াটা বেশি জরুরি বলে মনে করি। যদি এক দিনে একটা পরীক্ষা হয়, তাহলে ছোট-বড় সব মিলে যত নিয়োগ পরীক্ষা ঝুলে আছে, সেগুলো এক বছরেও শেষ হবে না। তাই সমন্বয়টা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন ৯ম গ্রেড থেকে ১৫তম গ্রেডের একটা পরীক্ষা শুক্রবার সকালে, একটা পরীক্ষা শুক্রবার বিকেলে এবং একটা পরীক্ষা শনিবার বিকেলে নিতে পারে। এর পাশাপাশি ১৬তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের তিনটা পরীক্ষাও ওই সময়ে নিতে পারে। কারণ, যাঁরা ৯ম-১৫ তম গ্রেডের চাকরিপ্রত্যাশী, তাঁরা সাধারণত এসব পরীক্ষা দেবেন না।
এভাবে সমন্বয় করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে বলে মনে করি। এতে সবাই সব পরীক্ষা দিতে পারবেন, আবার ঝুলে থাকা পরীক্ষাগুলোও তাড়াতাড়ি শেষ হবে। যেহেতু অনেক বড় একটা অংশ ঢাকার বাইরে থেকে পরীক্ষা দিতে যান, বিশেষ করে তাঁরা উপকৃত হবেন। কারণ, একবার ঢাকা গিয়েই তিনটা পরীক্ষা দিতে পারবেন। পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন কিছুদিন আগেই প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘একাধিক পরীক্ষা এক দিনে যাতে না হয়, সে জন্য ক্যাবিনেট ডিভিশন শাখা খুলতে পারে।’ সবই সরকারি প্রতিষ্ঠান হলে এমন কিছু দ্বারা কেন সমন্বয় করা যাবে না?
২. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড: অনেকেই বলেন, একসঙ্গে পাঁচ-সাতটা পরীক্ষা পড়লে অপেক্ষাকৃত খারাপ প্রস্তুতি যাঁদের, তাঁদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কথাটি আংশিক সত্য, তবে এইটা একটা সিস্টেমেটিক উপায়ে হওয়া উচিত। প্রায় সব বিজ্ঞপ্তিতেই বিভিন্ন গ্রেডের পদ থাকে। ধরুন, একটা বিজ্ঞপ্তিতে ৯ম গ্রেড, ১০ম গ্রেড, ১৩তম গ্রেড এবং ১৫তম গ্রেডের অনেকগুলো পদ আছে। এখন ওই বিজ্ঞপ্তিতেই যদি বলে দেয় যে সব গ্রেডের পরীক্ষা একসঙ্গে হবে, তাহলে নিশ্চয়ই একটার বেশি কেউ আবেদন করবেন না। যাঁর প্রস্তুতি যেমন, সে অনুযায়ী তিনি আবেদন করবেন।
বিএফসিএর একটা বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছিলাম, যেখানে ৭ পদের মধ্যে যেকোনো একটাতে আবেদন করতে বলেছিল, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) একটা গ্রুপের সব পদের পরীক্ষা একসঙ্গে হবে, সেটাও বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল। যাঁদের আসলেই ‘একটা চাকরি’ দরকার, এভাবে তাঁদের খুব উপকার হবে। যেহেতু ব্যাংক ছাড়া প্যানেল খুব কম হয়, তাই এতে সবার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে এবং বেকারের হারও অনেক কমে যাবে। কারণ, যাঁদের প্রস্তুতি ভালো থাকে, তাঁদের ৯ম, ১০ম, ১৩তম—সব গ্রেডেই চাকরি হয়, আবার অনেকের একটাতেও হয় না। যে পদগুলো ফাঁকা থাকে, সেগুলোর জন্য আবার বিজ্ঞপ্তি দেয়, আবার অনেক টাকার আবেদন ফির ধাক্কা। আমাদের আবেদন ফি হয়তো কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস।
সত্যি বলতে কি, বেকারদের নিয়ে কেউ ভাবে না। যদি ভাবত, তাহলে আবেদন ফি কখনোই ২০০-৩০০ টাকার বেশি হতো না। বিএসসিএস ২০০ টাকায় সবকিছু করতে পারলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কেন পারে না? একজন বেকার শিক্ষার্থী কীভাবে ৫০০/৭০০/১০০০ টাকা দিয়ে আবেদন করবেন? আবার এত টাকা দিয়ে আবেদন করার পর একই দিনে একই সময়ে ৯ম গ্রেডের তিন-চারটা পরীক্ষা কীভাবে নেয়? কিন্তু এ কথাগুলো কে বলবে, কাকে বলবে আর বলেই-বা কতটুকু লাভ হবে?
মো. ইয়াছির আরাফাত
বিএসসি ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়