ধন্যবাদ ফায়ার সার্ভিস!

১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা। অফিস থেকে বাসায় ফিরছি। গুলিস্তান থেকে বাসে উঠলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। আমাদের বাসটি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল।

বাসটি ফ্লাইওভারের ওপর সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ের ঠিক ওপরে (যেখানে কমলাপুর-বাসাবোর দিক থেকে ফ্লাইওভার মিলেছে, সেখান থেকে সামান্য পূর্ব দিকে) পৌঁছাতেই দেখলাম একজন লোক রক্তাক্ত শরীর নিয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। অদূরেই পড়ে আছে তাঁর মোটরসাইকেলটি।

এ দৃশ্য দেখে অন্য এক ব্যক্তি ও আমি বাসটি থামিয়ে ওই ব্যক্তির সাহায্যে নেমে পড়লাম। ওই ব্যক্তির কাছে গিয়ে দেখলাম, মুখ, হাত, পা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। আমার মতো আরও কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক ওই ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে এলেন। তাঁকে ধরাধরি করে সড়কের পাশে নেওয়া হলো।

পরীক্ষা করে দেখলাম, ওই ব্যক্তি নিশ্বাস নিচ্ছেন। কী করা যায় বুঝতে পারছিলাম না। কেউ কেউ বললেন, তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া দরকার। এ জন্য আমরা গাড়ি খুঁজছিলাম। কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সব কটিতেই যাত্রী ছিল। এদিকে আহত লোকটির অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।

হঠাৎ মনে পড়ল ফায়ার সার্ভিসের কথা। বৃষ্টি পড়ছিল। মুঠোফোন বের করে কয়েকবার চেষ্টা করে অবশেষে ফায়ার সার্ভিসে কল দিলাম। অপর প্রান্তে কল রিসিভ হলো। তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি দ্রুত কলটি আরেকজনের কাছে ফরওয়ার্ড করলেন। দুর্ঘটনার খবরটি তাঁকে বিস্তারিত জানালাম। তিনি আমাদের লোকেশন জেনে নিয়ে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করুন, আমাদের লোক এখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।’

কিছুক্ষণের মধ্যে আমাকে আরেকজন কল দিয়ে বিস্তারিত জানলেন। তাঁকে জানালাম, গুরুতর আহত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। বললেন, ‘ঠিক আছে, আমরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসছি।’

কথা বলার সময় তাঁদের গাড়ির ইমার্জেন্সি হুইসেল শোনা যাচ্ছিল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার ফাইটিং গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল হাজির হলো। ততক্ষণে ওই ব্যক্তির জ্ঞান ফিরে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সও পৌঁছে গেল ঘটনাস্থলে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই লোককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে চলে গেলেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এখানে উল্লেখ্য, ফায়ার সার্ভিস এই কাজগুলো করেছে কোনো বিনিময় ছাড়াই। কোনো পারিশ্রমিক বা সম্মানী ছাড়াই একেবারে নিঃস্বার্থভাবে এসব কাজ করেছে তারা।
দেশে পয়সা খরচ করে সরকারি বিভিন্ন সেবা পাওয়া যেখানে স্বপ্নের মতো ব্যাপার, সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ড অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে সেবা দানকারী এই সংস্থাকে তাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

  • আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ
    সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)
    [email protected]