গ্রামে শিক্ষার কি অবনতি ঘটছে

একদিন দুপুরে ডাইনিংয়ে খেতে বসেছি।
আমার সঙ্গে একই টেবিলে ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পিয়াস, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের স্বাধীন, মার্কেটিং বিভাগের মিনহাজ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের হাসিবুল হাসান শান্ত। জিপিএ-৫ নিয়ে আলাপ করতে করতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ক্রমাবনতি নিয়ে আলাপ হচ্ছিল।

আমাদের আলোচনায় উঠে এল গ্রামের ছেলেমেয়েরা আর আগের মতো পড়াশোনা করছে না। শহরের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে বাবা-মায়েরা যতটা সচেতন, গ্রামের ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। গ্রামে একজন লোকের টাকা আছে, ছেলেকে একটা ফোন কিনে দিচ্ছে। ফোন দিয়ে আসলে কী কী করা যায় আর যায় না, তাঁরা হয়তো জানেনও না। শহরে অভিভাবকেরা তুলনামূলক শিক্ষিত হওয়ায় তাঁরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক সচেতন থাকেন।

অথচ একসময় মেধাবীরা গ্রাম থেকেই বেশি উঠে আসত। প্রাকৃতিকভাবেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা ভালো করত, এই হার দিন দিন অনেক কমে যাচ্ছে। যদি খুব শিগগির কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এখন সব ছেলেমেয়ের হাতে স্মার্টফোন। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক থেকে শুরু করে সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তারা অভ্যস্ত।

আমি নিজেও গ্রামে গিয়ে দেখলাম, আগের মতো আর ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে না। সন্ধ্যার পর বাজার ও রাস্তার মোড়ে আড্ডা দেয়। হাতে হাতে স্মার্টফোন। একদম কম বয়সী ছেলেমেয়েরাও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে—এমন ছেলেও প্রেমিকাকে নিয়ে উধাও। ভাবা যায়! ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়স। গ্রামে একটা নীরব পতন হচ্ছে—এটা কেউ বুঝছে না। যাঁদের বোঝার কথা, তাঁরা সবাই শহরে থাকেন।

আমার গ্রামের এক অসহায় বাবার গল্প শুনলাম। তাঁর ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে বলেছে, স্মার্টফোন কিনে দাও, না হলে গলায় ফাঁস নেব। অসহায় বাবা ধার-কিস্তি করে ফোন কিনে দেন। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। পড়াশোনা অবনতির পাশাপাশি নৈতিক অধঃপতন ঘটছে একেবারেই নীরবে, কেউ তা বুঝছে না।

একসময় চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ নানা পেশাজীবী ছিলেন গ্রাম থেকে উঠে আসা। এখনো তা-ই দেখি। কিন্তু গ্রামের পড়াশোনার পরিস্থিতি যা দেখছি, এ দৃশ্য পাল্টে যেতে দেরি হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামের শিক্ষার্থীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাচ্ছে। ডাইনিংয়ে একজন বলল, গত তিন থেকে চার বছরে শহুরে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বাড়ছে। ভর্তি পরীক্ষায় পরিবর্তন আনার পর থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ভালো করতে পারছেন না।

কিন্তু ২০১৬ সালের দিকেও যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেন, বেশির ভাগ ছিলেন গ্রামের শিক্ষার্থী। ফলে, শুধু জিপিএভিত্তিক ফলাফল দিয়েই শিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে, এটা ভাবার সুযোগ নেই।

মো. শহীদুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল