বাংলাদেশে গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এক ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, যা দেশব্যাপী গভীর প্রভাব ফেলেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির ভিত্তিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুতই বিস্তৃত হয় এবং এতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যুক্ত হয়। তবে এই সময়ে যে ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হলো সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা এবং এর ফলে প্রায় ২০ লাখ ফ্রিল্যান্সারের ওপর প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সাধারণত তাঁদের অধিকার রক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য আন্দোলন করে আসছেন। তবে এবারের আন্দোলনটি ছিল অনন্য। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন নিরাপদ সড়ক, শিক্ষা ব্যয় কমানো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবিগুলোর জন্য দেশব্যাপী সমর্থন বৃদ্ধি পায়।
শিক্ষার্থী আন্দোলন চলাকালে সরকার হঠাৎ করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়। এটি প্রথমে শহরাঞ্চলে সীমিত ছিল কিন্তু দ্রুতই এটি দেশব্যাপী বিস্তৃত হয়। সরকার এই পদক্ষেপটি নিয়েছিল আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে গুজব ও অসত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য। তবে এই পদক্ষেপটি আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা, যাঁরা মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে থাকেন, এই ইন্টারনেট বন্ধের কারণে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হন। বাংলাদেশে প্রায় দুই মিলিয়ন ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যাঁরা দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করেন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাঁরা কাজ করতে পারেননি, যা তাঁদের আয় ও জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
ফ্রিল্যান্সাররা ইন্টারনেট বন্ধের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাঁরা সামাজিক মাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অনেকে সরাসরি শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন এবং তাঁদের ন্যায্য দাবি সমর্থন করেন।
ফ্রিল্যান্সাররা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে তাঁরা বাংলাদেশকে একটি দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য কর্মী উৎস হিসেবে প্রমাণ করেছেন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাঁদের আয় কমে যায় এবং তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেকে তাঁদের চুক্তি হারিয়েছেন এবং বিদেশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফ্রিল্যান্সাররা ইন্টারনেট বন্ধের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাঁরা সামাজিক মাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অনেকে সরাসরি শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন এবং তাঁদের ন্যায্য দাবি সমর্থন করেন।
ফ্রিল্যান্সারদের এই অংশগ্রহণ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।
হাসিনা সরকারের ইন্টারনেট বন্ধের পদক্ষেপটি পরবর্তী সরকারের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে যে অনলাইন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করলে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারকে আরও ভাবতে হবে।
আবুল কালাম শামসুদ্দিন, প্রকৌশলী