প্রথম আলো: আলোচিত বিষয় নিয়েই শুরু করি। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে এখন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরেই কোটি কোটি ডলার পাচার হচ্ছে। এসব অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি কি দেখতে পাচ্ছেন?
মুস্তফা কে মুজেরী: দেখুন, অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের সঠিক পরিসংখ্যান হয়তো আমরা জানি না। কিন্তু যতটুকু যা সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, অ্যানেকডোটাল এভিডেন্স, তাতে দেখা যায় এর পরিমাণ অনেক বেশি। কেউ কিন্তু অস্বীকার করেন না যে অর্থ পাচার হচ্ছে। এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যাও। প্রশ্ন হলো, আমরা কি এটা বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছি? মানি লন্ডারিং বন্ধ করার জন্য আমাদের আইন আছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানও আছে। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন নেই। অর্থ পাচার তখনই ঘটে, যখন বিভিন্ন ফাঁকফোকর থাকে। যাঁদের টাকা আছে, ক্ষমতা আছে, তাঁরাই এটা করতে পারেন। ক্ষমতা না থাকলে এটা করা যাবে না।
প্রথম আলো: এ ক্ষমতার উৎস কী?
মুস্তফা কে মুজেরী: আমি দুটি উৎসের কথা বলতে পারি। একটা হলো, আর্থিক সংগতি। অর্থাৎ আমার অর্থ থাকলেই কেবল আমি টাকা পাচার করতে পারি। আরেকটি হলো ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ না করে আমরা যতই কড়া আইন করি না কেন, যদি প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী না করি, তাহলে এটা চলতে থাকবে।
প্রথম আলো: অর্থ যারা পাচার করছে, তাদের শাস্তি হয়েছে, এমন উদাহরণ বিরল। গণমাধ্যমে তাদের অনেকের নাম এসেছে, পানামা পেপারসে কারও কারও নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কি খুব কঠিন?
মুস্তফা কে মুজেরী: হ্যাঁ, এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তথ্য সম্পূর্ণ না হলেও কিছু তো পাওয়া গেছে। কানাডার বেগমপাড়ার কথা আছে। এরা চিহ্নিত একবারে হয়নি, তা-ও বলব না। কিন্তু এরপর কী হয়েছে? আমরা মাঝপথে থেমে গেছি।
প্রথম আলো: আমরা কেন থেমে গেলাম?
মুস্তফা কে মুজেরী: আমরা থেমে গেলাম, কারণ তাঁরা হয়তো অতি শক্তিশালী ব্যক্তি। সমাজে প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার মতো ক্ষমতা হয়তো আমরা প্রদর্শন করতে পারিনি। আমরা একটা পর্যায়ে এসে নিবৃত্ত হচ্ছি। আমরা যদি শুরুতে এ নিয়ে কাজ করতাম, তাহলে এটা এত বড় আকার ধারণ করত না। বেআইনি কাজ করলে যদি কারও শাস্তি না হয়, তাহলে আরও অনেকেই উৎসাহিত হবেন। অসৎ কাজ করে শাস্তি না পাওয়া—আমাদের বৃহত্তর সমাজে এই যে একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে, এটি তারই অংশ।
প্রথম আলো: অর্থ পাচারের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থার কথাও চলে আসে। অভিযোগ আছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে, খেলাপি ঋণও প্রচুর।
মুস্তফা কে মুজেরী: সরকারি ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। সত্যিকার অর্থে এগুলোর অবস্থা ভালো করার চেষ্টা খুব একটা আমরা করিনি। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। এখন বড় সংখ্যায় বেসরকারি ব্যাংক হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো কোনো না কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। সবাই প্রতিপত্তিশালী গোষ্ঠী। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামোর মধ্যে রাখা, যাতে এগুলো সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে, সেদিকে আমরা নজর দিইনি। সুশাসনের দিকে নজর দিইনি। এসব বেসরকারি ব্যাংক তাদের মালিকের স্বার্থ রক্ষা করছে। বিভিন্ন উপায়ে মালিকেরা এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর দায়বদ্ধতা জনগণের প্রতি নয়, কেবল একটি গোষ্ঠীর প্রতি। গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথম আলো: অভিযোগ আছে যে ব্যাংকগুলো লুটপাটেরও শিকার হচ্ছে?
মুস্তফা কে মুজেরী: হ্যাঁ, কারণ স্বার্থের কাছে আবদ্ধ হয়ে গেলে তারা নিজ স্বার্থে একে ব্যবহার করবেই। পত্রপত্রিকায় তথ্য আসছে—ভালো ব্যাংক ছিল, কিন্তু পুঁজি চলে গেছে। এর জন্য দায়ী কারা? শুধু ব্যাংকের মালিকদের দোষ দিলে তো হবে না। বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। ব্যাংক তো একটি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মধ্যে চলার কথা। অর্থাৎ আবারও বলতে হয়, আইন আছে, কিন্তু আমরা আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করিনি। আমরা সুযোগ করে দিয়েছি।
প্রথম আলো: অর্থাৎ আপনি বলছেন, যাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা, কর্তৃপক্ষ, তাদেরও ব্যর্থতা আছে?
মুস্তফা কে মুজেরী: কিছুটা হলেও তো আছে। এ জন্যই তো আমাদের রেগুলেটরি কাঠামো, প্রতিষ্ঠান, যাতে তারা সুরক্ষা করে। ব্যাংকের টাকা তো জনগণের টাকা। ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হলো। এর ইতিহাসটা দেখেন। সংসদে একটা সংশোধনী এল, সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করা হলো। এটা কিন্তু রিগ্রেসিভ (পশ্চাৎমুখী) পদক্ষেপ ছিল। এমন অনেক উদাহরণ আছে। এগুলো কেন হচ্ছে? ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের জন্য হচ্ছে, তাদেরই সেবা করা হচ্ছে।
প্রথম আলো: তাহলে কি ব্যাংকগুলো নিয়ে কোনো শঙ্কা বোধ করেন?
মুস্তফা কে মুজেরী: ব্যাংকের ক্রেডিবিলিটি দেখেন, মান কিন্তু কমে আসছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাইরের অনেকে এলসি গ্রহণ করবে না। অর্থাৎ আর্থিক খাতটা দুর্বল হচ্ছে। এটা কিন্তু আমাদের জন্য অশনিসংকেত। কারণ, আমরা যে উন্নয়নের দিকে ভবিষ্যতে যাব, সেখানে আর্থিক খাতের ভূমিকা আরও বেশি হবে। বিশ্বায়নের সঙ্গে আমরা বৈশ্বিক আর্থিক খাতেও যুক্ত হয়ে যাচ্ছি। রুগ্ণ ব্যাংক বা রুগ্ণ আর্থিক খাত নিয়ে আমরা এগোতে পারব না। মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। আমার মনে হয় না কোনো সুখকর অনুভূতি হবে আগামী দিনগুলোয়। একটা রুগ্ণ আর্থিক খাত নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায় না।
প্রথম আলো: তাহলে আর্থিক খাতে যা ঘটছে, সেগুলো কি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অর্থনীতির সবকিছু ঠিকঠাক নেই?
মুস্তফা কে মুজেরী: অর্থনীতির খাতগুলো নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব একটা আশার আলো দেখছি না। আগামী দিনগুলোয়, আমরা যেভাবে চলছি, অর্থাৎ অর্থনীতির দুর্বলতা যদি আমরা ঢেকে রাখি, দূর না করি, ব্যবস্থা না নিই, তাহলে আমরা আরও বেশি দুর্বল হয়ে যাব।
প্রথম আলো: আসন্ন নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ফলে অর্থনীতি নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা কেমন দেখছেন?
মুস্তফা কে মুজেরী: দেখুন, আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অর্জন আছে, সফলতা আছে। অর্থনীতি বড় হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এখন আমাদের পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হবে। এত দিন ধরে কৃষি, তৈরি পোশাক, রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির চালক ছিল। কিন্তু এরা কি আমাদের পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবে? এটা একটা বড় প্রশ্ন।
প্রথম আলো: এই সন্দেহ কেন?
মুস্তফা কে মুজেরী: সন্দেহ এ কারণে যে আমরা প্লেনে করে আকাশে যেতে পারি, কিন্তু সেটা আমাদের চাঁদে নিতে পারবে না। অর্থনীতির যে ইঞ্জিনগুলো আমাদের আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়। তৈরি পোশাক খাত একটা শক্তি। কিন্তু আমরা যেখানে যেতে চাই, এই শিল্প কি আমাদের সেখানে নিতে পারবে? চীন অথবা আরও কিছু দেশ একসময় পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এই শিল্প এখন আর তাদের জন্য চালিকা শক্তি নয়। এগুলোকে বলে ফুটলুজশিল্প, সস্তা শ্রমের দেশে চলে যায়। মনে রাখতে হবে, আমাদের এখানেও মজুরি বাড়ছে।
প্রথম আলো: অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে যদি যেতে হয়, তাহলে তার জন্য কি সঠিক পরিবেশ-পরিস্থিতি কিংবা প্রস্তুতি আছে?
মুস্তফা কে মুজেরী: দেখুন, পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হলে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের তো আধুনিক প্রযুক্তি নেই। তাহলে কী করা দরকার? সহজে প্রযুক্তি পাওয়ার উপায় হলো, বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে যোগ দেওয়া। যেমন টয়োটা বিভিন্ন দেশে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করে এবং এরপর মূলত জাপানে গাড়ি সংযোজন করে। এর মাধ্যমে তাদের প্রযুক্তি অন্য দেশে গেছে। কিন্তু আমরা কি কোনো ভ্যালু চেইনে যোগ দিতে পেরেছি? হাইটেকে আমরা কিন্তু যৌথ বিনিয়োগে যেতে পারিনি।
বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে আমরা কাগজে-কলমে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলছি। কিন্তু তারা আসছে না কেন? সামনের দিনগুলো কিন্তু ইট ক্যানট বি আ রেপ্লিকেশন অব দ্য পাস্ট। আমাদের প্রতিষ্ঠান ও নীতিকাঠামো ঠিক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের বড় সমস্যা রয়ে গেছে। যার জন্য কাগজে-কলমে সুযোগ-সুবিধা দিলেও আমরা যা করতে চাই, তা করতে পারছি না।
প্রথম আলো: আপনার কী মনে হয়, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা সেই পথে এগোচ্ছেন? ঠিক পথে চিন্তাভাবনা করছেন?
মুস্তফা কে মুজেরী: তাঁরা যা বলছেন, তাতে মনে হয় ইচ্ছাটা তাঁদের আছে। দেখুন, আমরা নীতিমালার কথা বলছি। কিন্তু সমস্যাটা বাস্তবায়নে। স্বাধীনতার পর আমরা যখন উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলাম, তখন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কম ছিল। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের গুণমানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো যদি আমরা শক্তিশালী না করতে পারি, তাহলে আমরা এগোতে পারব না। ভালো কাজ করছে, এমন প্রতিষ্ঠান আমরা পাচ্ছি না। এখানেই আমাদের বড় দুর্বলতা রয়ে গেছে। আমি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলছি। তবে এগুলোকে পারফর্ম করতে হলে একই সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পারফর্ম করতে হবে। কারণ, একটা থেকে আরেকটা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না।
প্রথম আলো: বর্তমান যে পরিস্থিতি—আমরা একটা রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখছি, আপনি কি মনে করেন যে এই পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতিতেও সংকট শুরু হতে পারে?
মুস্তফা কে মুজেরী: সংকট হয়তো একটা গভীর শব্দ। এটা রিলেটিভ। একদিকে সংকট থাকে, অন্যদিকে সম্ভাবনা। এদের মধ্যে দ্বন্দ্বও থাকে। বর্তমান যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, তা কত দ্রুত, কত কার্যকর, কতটা দক্ষতার সঙ্গে দূর করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছি, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে আমাদের অনেক ধরনের সংকট রয়েছে। মূল্যস্ফীতির বড় শঙ্কা রয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অবস্থার দিকে যদি তাকান কিংবা ব্যাংকব্যবস্থার দিকে যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন প্রতিটি খাতেই দুর্বলতা আছে। মূল বিষয় হচ্ছে এগুলো দূর করতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না। সব ক্ষেত্রে না হলেও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নিরাশ হতে হয়।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে সঠিক একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার—যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তারা যাতে একটা মেসেজ পায় যে না এটা আর চলবে না। এই মেসেজটা আমরা দিতে পারিনি। আমরা বলছি যে আমরা এটা করতে চাই, কিন্তু আমাদের কার্যকলাপ তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হচ্ছে না। বা যতটুকু আমাদের করা দরকার, ততটুকু আমরা করতে পারছি না। আমরা হয়তো এক পা এগিয়ে যাচ্ছি, আবার দুই পা পিছিয়ে আসছি। একটা অনিশ্চয়তা, একটা দোদুল্যমানতা বিরাজ করছে। ফলে স্পষ্ট একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেন এটা দেওয়া যাচ্ছে না, তার হয়তো অনেক কারণ থাকতে পারে।
প্রথম আলো: যেমন?
মুস্তফা কে মুজেরী: এর সঙ্গে ক্ষমতার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তারা হয়তো এত শক্তিশালী যে রাষ্ট্রও খুব একটা দৃঢ় মনোভাব পোষণ করতে পারছে না। আমাদের দেশে সেই গোষ্ঠীগুলোই শক্তিশালী হয়, যারা ক্ষমতাবানদের সঙ্গে জড়িত থাকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গোষ্ঠীস্বার্থ থাকে। এদের একটি যখন আরেকটির সঙ্গে মিলিত হয়, তখনই তারা ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে। দুর্ভাগ্যবশত, যেটা সম্ভবত আমাদের দেশে ঘটে গেছে। ফলে তারা অসম্ভব শক্তিশালী হতে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা আইনকেই বিভিন্নভাবে অতিক্রম করতে সক্ষম হচ্ছে। আমাদের এটা ভাঙতে হবে, এখান থেকে বের হতে হবে।
প্রথম আলো: মূল্যস্ফীতির কথা আপনি বলেছিলেন। শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি দ্রুতই এক অঙ্কে নামিয়ে আনল। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে পারছে না কেন? ঘাটতিটা কোথায়?
মুস্তফা কে মুজেরী: ভারতেও কিন্তু কমেছে। মূল্যস্ফীতি কিসের ওপর নির্ভর করছে? বিগত কয়েক মাসের দিকে আপনি দেখেন। যে পণ্যের মূল্য বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই, তার মূল্যও কিন্তু বেড়েছে। অর্থনীতির ভাষায় কিছু কারণ দেখানো যেতে পারে, বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে, তাই দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু অযৌক্তিক কারণে কেন বাড়বে? আমার মতে, একটা বড় কারণ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির পেছনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বড়ভাবে কাজ করছে।
প্রথম আলো: অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নৈতিকতার ঘাটতি রয়েছে?
মুস্তফা কে মুজেরী: নৈতিকতা আমরা ক্রমাগত বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছি। অর্থনীতির অবশ্যই একটা নৈতিক ভিত্তি থাকতে হবে। গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা তো নৈতিকতা হতে পারে না। জনস্বার্থ রক্ষা হলো নৈতিকতা। আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগতভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। তাদের যে দায়দায়িত্ব, সেটা তারা সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। এটা কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান—সব ক্ষেত্রেই হচ্ছে।
প্রথম আলো: সামনে একটা নির্বাচন আছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা আমরা দেখছি। সবাই একমত, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি, তাতে অর্থনীতির জন্য একটা কঠিন সময় আসছে। কী করা দরকার?
মুস্তফা কে মুজেরী: আমাদের মতো দেশে নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তা অনেক বেশি হয়। এটা বাস্তবতা। এমন সময়ে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় নেন। আমার মনে হয়, আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দেবে। ছয় মাস বা কাছাকাছি সময় আমাদের জন্য ক্রিটিক্যাল হবে। পরিস্থিতি যদি আমরা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না রাখতে পারি, যদি খারাপের দিকে যায়, তাহলে আরও দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যাব।
এখনই চিন্তা করতে হবে, আমরা অর্থনীতিকে কতটা সচল রাখতে সক্ষম হবে। স্বল্পমেয়াদি একটা দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। দেখতে হবে এ মুহূর্তে কী করণীয়। অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে আছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে আমরা রয়েছি। এটা যাতে আরও খারাপের দিকে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের অনিশ্চয়তা অনেক বেশি। এটা কাটিয়ে ওঠার জন্য শক্তি সঞ্চয়ের এখনই সময়।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুস্তফা কে মুজেরী: আপনাকেও ধন্যবাদ।