বাংলাদেশে বামপন্থী তথা কমিউনিস্টদের বেহাল অবস্থা কেন?
হায়দার আকবর খান রনো: এটা একই সঙ্গে যেমন সাধারণ প্রশ্ন, আবার জটিল প্রশ্নও। এর উত্তর খুঁজতে হলে ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। প্রথমত, যখন ভারত ভাগ হয়, তখন সারা ভারতে যে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল, নেতাপর্যায়ের একজনও এখানে আসেননি। কমরেড মোজাফফর আহমদের বাড়ি সন্দ্বীপ, তিনিও আসেননি। বাংলার প্রাদেশিক কমিটির যাঁরা নেতা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কে এসেছেন? একমাত্র খোকা রায়। মণি সিংহও তখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন না। খুব সম্ভবত নেপাল নাগ ছিলেন। নেতৃত্বের একটা শূন্যতা ছিল। জেলাপর্যায়ের নেতাদের এনে শীর্ষ অবস্থানে বসানো হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আরেকটি সমস্যা তৈরি করল। ওই দাঙ্গার পর ১৫ হাজার নেতা–কর্মী দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্টদের ওপর মুসলিম লীগ সরকারের বর্বরতা ও নিপীড়নের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। ইলা মিত্রের ঘটনা সবাই জানেন। আমি আরেকজনের কথা বলব। যাঁর নাম ইতিহাসে সেভাবে আসেনি। তাঁর নাম অপর্ণা পাল। নানকার বিদ্রোহের নেতা। তাঁর ওপরও অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
এর জন্য কি বি টি রণদীভের ‘ইয়া আজাদি ঝুটা হ্যায়’ নীতি অনেকাংশে দায়ী ছিল না?
হায়দার আকবর খান রনো: কিছুটা। কিন্তু পুরোপুরি নয়। প্রধানত মুসলিম লীগের চরিত্রের মধ্যেই এটা ছিল যে তারা বামপন্থীদের সহ্য করতে পারত না। আজকেও যারা মৌলবাদী, তাদের মূল জায়গাটা কিন্তু একই। আমার মতে, এখানকার মৌলবাদ চারটি স্তম্ভের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে—ভারতবিরোধিতা, হিন্দুবিরোধিতা, বাঙালি সংস্কৃতির বিরোধিতা এবং এখন নতুন করে যোগ হয়েছে নারীবিদ্বেষ।
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে আপনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টিতে কীভাবে গেলেন?
হায়দার আকবর খান রনো: ১৯৬১ সালে আমি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হই। তখন প্রথম বর্ষে পড়ি। কমিউনিস্ট পার্টি তখন গোপন পার্টি। সে সময়ে পার্টি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করল। যিনি যোগাযোগ করিয়ে দিলেন তাঁর নাম মকবুলার রহমান। তিনি আমার হাতে শিখা পত্রিকা তুলে দিলেন। শিখা পত্রিকা তখন সাইক্লোস্টাইলে বের হতো। পার্টির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ১৯৬২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে মার্শাল ল–বিরোধী স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে যাব। এর মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন।
তখন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠন কীভাবে একত্র হলো?
হায়দার আকবর খান রনো: ছাত্র ইউনিয়ন তো আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আছে। সোহরাওয়ার্দী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছাত্রলীগের মধ্যে সাংঘাতিক উত্তেজনা তৈরি হলো। তখন আমরা একত্রে বসলাম। ঘটনাক্রমে এনএসএফ ও ছাত্র শক্তিকেও ডাকা হলো। তারা আইয়ুব খানের লোক ছিল। রাতের বেলা মধুর ক্যানটিনে বসলাম। ওই সভায় ফরহাদ ভাইয়ের (মোহাম্মদ ফরহাদ) ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল ও বুদ্ধিদীপ্ত। মনি ভাইও (শেখ ফজলুল হক মনি) ওই সভায় ছিলেন। ফরহাদ ভাই প্রস্তাব দিলেন পরদিন ধর্মঘট করা হোক। এনএসএফ ও ছাত্র শক্তি তো কিছুতেই রাজি না। তর্কবিতর্ক হতে হতে রাত ১২টা বেজে গেছে। এনএসএফ ও ছাত্র শক্তি চলে গেলে ফরহাদ ভাই বললেন, কালকে ধর্মঘট হবেই। রাত ১২টা বেজে গেছে। ওরা এখন আর আইবিকে (গোয়েন্দা পুলিশ) খবর দিতে পারবে না। সকালে সফল ও সর্বাত্মক ধর্মঘট হলো।
মস্কো ও পিকিং দ্বন্দ্বে আপনি কেন পিকিং পন্থা বেছে নিলেন?
হায়দার আকবর খান রনো: তখন চীন ও রাশিয়ার নথিপত্রগুলো আসতে শুরু করেছে। সেগুলো পড়ে চীনের অবস্থান অধিক বিপ্লবী বলে মনে হয়েছিল। পরবর্তীকালে তো সবই পাল্টে গেল। সেই চীনও থাকল না, রাশিয়াও রইল না। আজ রাশিয়া তো অফিশিয়ালি সমাজতন্ত্রে নেই। আর চীন আনঅফিশিয়ালি সেই পথে নেই।
এটার কারণ সমাজতন্ত্রের তত্ত্বগত ব্যর্থতা নাকি প্রয়োগগত?
হায়দার আকবর খান রনো: সমাজতন্ত্রের যাত্রা কিন্তু অজানা পথে শুরু হয়েছিল। এর কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। আমি কাউকে দোষ দেব না। লেনিনের অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে একটা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের অভিযাত্রা গেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের জন্য স্তালিনকে দোষারোপ করা হয়েছে। কিন্তু স্তালিনবিরোধীরা তো স্তালিনের পর কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা সেই ভুল কেন সংশোধন করেননি?
’ ৭১-এ মস্কোপন্থীরা আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিল। আপনারা পিকিংপন্থীদের একাংশ কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি করলেন, সেটা কোন উপলব্ধি থেকে?
হায়দার আকবর খান রনো: ’ ৭১–এর আগে চীনপন্থীরা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এর পেছনে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত বিষয়–আশয় ছিল; কিছুটা রাজনৈতিক ব্যাপারও ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আমরা প্রাধান্যে নিয়ে এসেছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দেশের ভেতরে যুদ্ধ করব। সারা দেশে আমাদের ১৪টি আধা মুক্ত এলাকা ছিল। আমাদের সঙ্গে ৩০ হাজারের মতো সশস্ত্র যোদ্ধা ছিলেন।
স্বাধীন দেশে ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগের যে সর্বাত্মক বিরোধিতার পথ নিয়েছিলেন, সেটা কি সঠিক ছিল?
হায়দার আকবর খান রনো: আমরা সর্বাত্মক বিরোধিতা করেছি এটা ঠিক নয়। যেমন ধরুন সংবিধানের ব্যাপারটা। আমরা এর কিছু কিছু বিষয়ে বিরোধিতা করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু সংবিধানে যে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, সেটাকে আমরা সমর্থন করেছিলাম। আমি এখনো মনে করি, ইতিহাসে এটা বিরাট পদক্ষেপ ছিল।
কিন্তু ভাসানীর ন্যাপের অবস্থান ছিল ভিন্ন?
হায়দার আকবর খান রনো: মাওলানা ভাসানী সেই সময়টাতে যে অবস্থান নিয়েছেন, সেটা সমর্থন করা যায় না। আমি একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। তিনি বুঝতে পেরে বললেন, তুমি তো কমিউনিস্ট। আমার থেকে শত হাত দূরে থাকো। আমি এখন যে রাজনীতি করব তার সঙ্গে তোমাদের রাজনীতি মিলবে না। কমিউনিজম ও কমিউনালিজম একসঙ্গে চলে না। আমি এখন একটু কমিউনালিজম করব। এটা দরকার আছে।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের যে ট্র্যাজেডি, তার কী অভিঘাত হতে পারে সেটা কি বামপন্থীরা সে সময়ে বুঝতে পেরেছিল?
হায়দার আকবর খান রনো: না, তখন ঠিক বুঝতে পারা যায়নি। ওই হত্যাকাণ্ডকে আমরা নিন্দা জানিয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। তবে পরে আমার উপলব্ধিতে এসেছে, এটা সাধারণ হত্যার ঘটনা ছিল না। এর পেছনে দেশি–বিদেশি চক্রান্ত ছিল। এর প্রভাবে বাংলাদেশ তার বৈশ্বিক অবস্থান বদল করল। মস্কো-ভারত শিবির থেকে বাংলাদেশ মার্কিন শিবিরে চলে গেল। এ কারণে এটার ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনেক। বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান এসে সেটা আবার চালু করলেন। এটার ফলাফল আমরা ভোগ করছি।
নানা সীমাবদ্ধতা ও বিভাজন সত্ত্বেও গেল শতকের সত্তর ও আশির দশকে এ দেশে বামপন্থীরা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নব্বইয়ের পর সেটি ধরে রাখা গেল না কেন?
হায়দার আকবর খান রনো: এখানে দুটো বিষয় কাজ করেছে। প্রথমত পরবর্তীকালে যাঁরা নেতৃত্বে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে সুবিধাবাদ কাজ করেছে। ১৯৬৭ সালে মস্কো-চীন প্রশ্নে কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হলো। সেই ভাগের কয়েক বছরের মধ্যে চীনাপন্থীরা কয়েক টুকরা হয়ে গেল কেন? এই প্রশ্নের জবাব নেই। অনেক ক্ষেত্রেই আদর্শের চেয়ে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বই বেশি কাজ করেছে। আবার যদি মস্কোপন্থীদের কথা আসি। নেতারা এতবার মস্কো গেলেন, প্রশিক্ষণ নিলেন, মার্ক্সবাদ শিখলেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির দুই–তৃতীয়াংশ পার্টি বিলোপের পক্ষে অবস্থান নিলেন। ভারতে কিন্তু তা হয়নি।
আপনি একসময় পিকিংপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এখন মস্কোপন্থী অংশ অর্থাৎ বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিউনিস্ট পার্টির কী অবস্থা এখন?
হায়দার আকবর খান রনো: এখন দেশে যেসব বামপন্থী দল আছে, তাদের মধ্যে সিপিবিরই জনভিত্তি আছে। একটি পার্টি তখন পার্টি হয়ে ওঠে, যখন তার জনভিত্তি থাকবে, তাত্ত্বিক বিষয়ে চর্চা থাকবে। আবার এ–ও সত্য যে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের নেতৃত্বের সঙ্গে এখনকার নেতৃত্বের অনেক পার্থক্য আছে। নেতৃত্বের কোন্দল আছে সব দলেই।
আশির দশকে আপনার দুটি পুস্তিকা বেশ আলোচিত হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে, যার একটি ছিল পিকিংপন্থী বন্ধুদের প্রতি। আরেকটি সিপিবির বন্ধুদের প্রতি। এ লেখায় আপনি দুই পক্ষকেই অন্ধত্ব পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সিপিবি ও পিকিংপন্থী বন্ধুরা কি আপনার কথা শুনেছিলেন।
হায়দার আকবর খান রনো: তখন শোনেননি। পরে শুনেছেন।
কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে তাঁদের ভিত কতটা আছে?
হায়দার আকবর খান রনো: এখানে কৃষিব্যবস্থায় একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। আগের পদ্ধতিতে কৃষক আন্দোলন হবে না। কৃষির উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। সে ক্ষেত্রে এখানে কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে নতুন করে ভাবতে হবে।
ভারতে তো কৃষিপণ্যের ন্যায্য দামের দাবিতে বিরাট কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠল। আন্দোলনের মুখে মোদি সরকার আইন পাল্টাতে বাধ্য হলো।
হায়দার আকবর খান রনো: অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের এখানে বামপন্থীরা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। কিন্তু ভয়ংকর বিপদ হলো বামপন্থীদের স্থান বুর্জোয়ারা দখল করতে পারেনি। দখল করেছে মৌলবাদী শক্তি। অনেকে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে ভাবে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। যেখানে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মতো মৌলবাদী শক্তি আছে। দুর্ভাগ্য হলো আওয়ামী লীগের ওপরও মৌলবাদী শক্তির আসর আছে। হেফাজতের কথামতো তারা পাঠ্যবই পরিবর্তন করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। আমি মনে করি, হেফাজত ও জামায়াতের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
আপনারা আটটি বামপন্থী দল নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট করেছিলেন। সেই জোটের অবস্থা কী?
হায়দার আকবর খান রনো: জোট জোটের জায়গায় আছে। কিছু কিছু কর্মসূচিও তারা নিচ্ছে।
কিন্তু সেই কর্মসূচি জনজীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে কি?
হায়দার আকবর খান রনো: খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। জোটে এমন দলও আছে, যাদের একজন নেতা আছেন। দ্বিতীয় নেতা নেই।
অনেক সাচ্চা বাম দল কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদকে বাম দলই মনে করে না। ভাবে সংশোধনবাদী।
হায়দার আকবর খান রনো: তারা যে সাচ্চা তার প্রমাণটা কী? তাঁরা বলবেন, লোভে পড়েননি। সুবিধা নেননি। আমরা তো সুবিধা নিইনি কারও কাছ থেকে। নেতৃত্বের দুর্বলতা সব দলেই আছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ হয়েছে। চীন ধনতন্ত্রের পথে হাঁটছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব পরিসরে বামদের ভবিষ্যৎ কী?
হায়দার আকবর খান রনো: আন্তর্জাতিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি ভাটার টান চলছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটাই শেষ কথা নয়। প্রখ্যাত অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ জোসেফ শুমটার বলেছেন, পুঁজিবাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে টিকবে না। সমাজতন্ত্রের পুনরুত্থান ঘটবে। তিনি কিন্তু মার্ক্সবাদী নন। সমাজতন্ত্রের মূল কথা ছিল প্ল্যানড ইকোনমি। সব মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা; ধনতন্ত্রে তা কখনো সম্ভব নয়।
ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএমের সঙ্গে আপনাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল। তারা পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর শাসন করার পরও কোনো পরিবর্তন আনতে পারল না। এর ব্যাখ্যা কী?
হায়দার আকবর খান রনো: সিপিএম তো একটি বা দুটি রাজ্যে ক্ষমতা নিয়েছিল। সারা ভারতে নয়। ভারতের অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তন করতে পারেনি। নিম্ন স্তরে দলের নেতা-কর্মীরা অনেক মাস্তানি ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। উচ্চপর্যায়ের কোনো নেতার বিরুদ্ধে কিন্তু দুর্নীতি বা ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ আসেনি। তারা সাধ্যমতো জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেছে।
আপনার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে জানতে চাইছি বাংলাদেশের এ মুহূর্তে প্রধান বিপদ কী? উত্তরণের উপায়?
হায়দার আকবর খান রনো: বাংলাদেশের প্রধান বিপদ হলো ধর্মীয় মৌলবাদ। আবার আমরা যখনই ঐক্যবদ্ধভাবে এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পেরেছি, জয়ী হয়েছি। ভবিষ্যতের লড়াইয়েও যেমন প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সাংস্কৃতিক শক্তির মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। এখন দরকার এমন একটি সরকার, যারা ধর্মীয় মৌলবাদবিরোধী হবে; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। শ্রমিক, কৃষক ও মধ্যবিত্ত জনগণের কল্যাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি দরকার। এগুলো নিয়ে বাম ও বামদের বাইরেও সবাইকে একজোট হওয়া দরকার। বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী সবাইকে নিয়ে একটা বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
হায়দার আকবর খান রনো: আপনাদেরও ধন্যবাদ।