বিশেষ সাক্ষাৎকার: মোস্তফা আবিদ খান

আমাদের শুল্কনীতি তৈরিতেই গলদ আছে

ড. মোস্তফা আবিদ খান। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য। তিন দশকের বেশি সময় তিনি এই কমিশনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ২০২১ সালে অবসরে যান। বর্তমানে মোস্তফা আবিদ খান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একটি প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয় সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপ নিয়ে। আলোচনায় আসে বাংলাদেশের শুল্কনীতি ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের প্রসঙ্গও।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

প্রথম আলো:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের পটভূমি কী? বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে কতটা অভিঘাত তৈরি করবে?

মোস্তফা আবিদ খান: প্রথম কথা হলো এটা পাল্টা শুল্কারোপ নয়। পাল্টা শুল্ক হলো কোনো দেশ নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপ করলে তার বিপরীতে সমহারে শুল্ক বসানো। কিন্তু এখানে তো আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে চেয়েছেন ট্রাম্প। অর্থাৎ তারা যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশও যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমপরিমাণ বা তার কাছাকাছি পণ্য নেয়, সেই চেষ্টাই ট্রাম্প করতে চেয়েছেন। আমেরিকান পণ্যে শূন্য শুল্ক দিলেও ভারসাম্য আনা যাবে না। আমরা পণ্য আমদানি করব আমাদের চাহিদা অনুযায়ী, আবার অন্য দেশও পণ্য আমদানি করবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী। মার্কিন পণ্যের চাহিদা আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। বিশ্ববাণিজ্যের নিয়ম হলো যেখান থেকে আমরা কম দামে পণ্য পাব, সেখান থেকে আমদানি করব। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখানে শুল্ক আরোপ করে ভারসাম্য আনা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে কেন পণ্য আমদানি করে, তাদের চাহিদা আছে বলে। এটাও ঠিক নয় যে বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ কর ধার্য করছে।

প্রথম আলো:

এই শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

মোস্তফা আবিদ খান: অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে সেখানে চাহিদা কমে যাবে। আর চাহিদা কমে গেলে আমাদের রপ্তানিও কমবে। এক পরিসংখ্যানে দেখলাম, শুল্ক বাড়ানোর কারণে প্রত্যেক নাগরিককে সেখানে বছরে ২ হাজার ৩০০ ডলার বেশি ব্যয় করতে হবে। এটা তো ভোক্তারা মানবেন না। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন।

প্রথম আলো:

এ অভিঘাত উত্তরণে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

মোস্তফা আবিদ খান: প্রশ্ন হলো যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কের দায়ভারটা কার ওপর পড়বে? যদি এটা ভোক্তার ওপর পড়ে, তাহলে বাংলাদেশ কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ভিয়েতনামে ৪৬ ভাগ এবং কম্বোডিয়ায় ৪৯ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। বাংলাদেশে ৩৭ শতাংশ। আবার ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে তারা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। ভারত ও পাকিস্তানের ওপর শুল্কহার যথাক্রমে ২৬ ও ৩০ শতাংশ। তবে মেক্সিকো থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব। আরেকটি প্রশ্ন হলো বর্ধিত শুল্কটা কে বহন করবেন? এটি যদি ভোক্তা বহন করেন, আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বর্ধিত শুল্ক রপ্তানিকারককে বহন করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। আমাদের ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেটি বহন করা সম্ভব হবে না। আরেকটি বিকল্প হলো বর্ধিত শুল্কের বিষয়টি তিনটি ভাগে ভাগ করা। এক ভাগ রপ্তানিকারক, এক ভাগ আমদানিকারক ও আরেক ভাগ ভোক্তা বহন করলেন। তাতেও বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এখন যে লাভ হয়, সেটা গড়ে ১০ শতাংশের বেশি নয়। এর মধ্য থেকে তারা ১২ শতাংশ বেশি ব্যয় বহন করবে কীভাবে?

‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের যে রপ্তানি আছে, সেটা তো কমাতে চাই না। অতএব, তাদের পণ্য আমদানি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
ছবি: কবির হোসেন
প্রথম আলো:

তাহলে সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?

মোস্তফা আবিদ খান: একমাত্র উপায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো। প্রশ্ন হলো, তা কতটা সম্ভব হবে? বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিকারকেরা একটি ওয়্যার হাউস প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছেন। এটা করা হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়বে। বাংলাদেশে আমেরিকান পণ্য আমদানির ওপর সব মিলিয়ে ৬ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। তবে ভ্যাট ও অগ্রিম করকে শুল্কের মধ্যে ফেলা যাবে না। এই দুটো বাদ দিলে আমদানি কর পড়ে ৩.৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক পড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র নন ট্যারিফ বাধার কথা বলতে পারে। সেখানে আমাদের কিছু করণীয় আছে বলে মনে করি। আমরা আমেরিকান সব পণ্য তাদের দেশ থেকে আমদানি করি, তা-ও নয়। অনেক পণ্য তৃতীয় দেশের মাধ্যমে এখানে আমদানি হয়। বেশি দাম হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করবে না, এটাই স্বাভাবিক। তারা যেখানে সস্তায় পাবে, সেখান থেকেই নিয়ে আসবে। আমদানি-রপ্তানি জবরদস্তি করে হয় না।

প্রথম আলো:

ডোনাল্ড ট্রাম্প তো তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এই সময়ে আমরা কী করতে পারি?

মোস্তফা আবিদ খান: আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের যে রপ্তানি আছে, সেটা তো কমাতে চাই না। অতএব, তাদের পণ্য আমদানি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। এখানে মার্কিন পণ্যের যে আমদানি শুল্ক আছে, সেটাও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে—কোন কোন পণ্যে শুল্ক কমানো যায়। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে এটা করা প্রায় অসম্ভব। ভারত জানুয়ারি মাসেই বেশ কিছু মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিডার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সেখানে প্রতিনিধি পাঠাতে হবে।

প্রথম আলো:

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নীতি কি টেকসই হবে বলে মনে করেন?

মোস্তফা আবিদ খান: আমার মনে হয় না টেকসই হবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ প্রতিবাদ করেছেন। এই শুল্কের কারণে কেবল রপ্তানিকারক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, আমদানিকারক দেশের ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্ধিত শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে এবং সেটা ভোক্তাদেরই শোধ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি বদলানো যাবে না। মার্কিন নাগরিকেরাই সেটা পারবেন। সেখানকার ভোক্তারা মাঠে নেমেছেন। ব্যবসায়ীরাও নামবেন।

প্রথম আলো:

ভারত জানুয়ারিতে শুল্ক কমাল। আমরা কেন করলাম না? এটা কি সরকারের অদূরদর্শিতা বলে মনে করেন?

মোস্তফা আবিদ খান: এ রকম যে হবে, কেউ ভাবতে পারেননি। ভারতের শুল্ক কমানোর পরও যুক্তরাষ্ট্র সেখানে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা করা হয়েছে ২০২৪ সালে ভারতে কী পরিমাণ মার্কিন পণ্য গিয়েছে আর কী পরিমাণ ভারতীয় পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছে, তার ভিত্তিতে।

‘শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, সার্বিকভাবে আমাদের শুল্কনীতিটা পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’
ছবি: কবির হোসেন
প্রথম আলো:

আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়িয়ে কি ক্ষতি পোষানো যাবে? বাংলাদেশ কি বিকল্প বাজারের কথা ভাবতে পারে?

মোস্তফা আবিদ খান: আমি মনে করি না আমেরিকার বিকল্প বাজার পাওয়া যাবে। মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণটা দেখতে হবে। তারা বছরে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে বিদেশ থেকে। আমাদের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজারও যুক্তরাষ্ট্র।

প্রথম আলো:

চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর মাধ্যমে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল?

মোস্তফা আবিদ খান: যুদ্ধ তো শুরু হয়ে গেল। আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে গেলাম।

প্রথম আলো:

তাহলে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা কি অকেজো হয়ে গেল?

মোস্তফা আবিদ খান: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় বাণিজ্যবিরোধ মিটমাট করার যে ব্যবস্থা ছিল, সেটা এখন অকেজো হয়ে গেল। তার ওপর ট্রাম্পের দেশভিত্তিক শুল্ক আরোপ করার চেষ্টা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মূলনীতির পরিপন্থী। নিয়ম মেনেই অন্যান্য দেশ শুল্ক কমানো কিংবা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব তোয়াক্কা করেন না। তিন মাস পর তিনি যে এই নীতি থেকে সরে আসবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই। তিন মাস পর তিনি নতুন হিসাব–নিকাশ করবেন, তা কতটা আশা করা যায়? বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ২০২৪ সালের হিসাব ধরে। এই তিন মাসে আমাদের আমদানি বাড়বে বলে মনে হয় না। বরং রপ্তানি কমে যেতে পারে। তিন মাসের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণ হলে নতুন শুল্ক দিতে হবে না। এ কারণে যেসব আমদানিকারক কার্যাদেশ স্থগিত করেছিল, তা প্রত্যাহার করেও নেওয়া হয়েছে। এটাকে ইতিবাচক বলা যায়। তবে এই সময়েও ১০ শতাংশ শুল্ক কিন্তু দিতে হবে।

প্রথম আলো:

ডোনাল্ড ট্রাম্প যে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, এর পেছনে কী যুক্তি ছিল?

মোস্তফা আবিদ খান: তিনি এটা করেছেন নির্বাহী আদেশে। এর আগে তাঁকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে। অন্যথায় এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে হতো। নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, চীন, ভিয়েতনাম, ব্রাজিলসহ  যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশে আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। ফলে মার্কিন পণ্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেসব পণ্যের ওপর শুল্ক বেশি। এটা চলতে পারে না।

প্রথম আলো:

দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতিটা কীভাবে দেখছেন?

মোস্তফা আবিদ খান: দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তো দেখি না। পুরো বিশ্ববাণিজ্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে। আসলে কেবল রপ্তানিকারক দেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ও আমদানি পণ্যের মধ্যে গুণগত ফারাক আছে। তারা যেসব পণ্য আমদানি করে, সেগুলো শ্রমনির্ভর। আর যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলো হলো জ্ঞাননির্ভর। হ্যাঁ, ভবিষ্যতে যদি আমরা জ্ঞাননির্ভর পণ্য রপ্তানি করতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা লাভবান হব। এখন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। ভবিষ্যতে আমাদের একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে।

প্রথম আলো:

শুল্কের বিষয়ে আর কিছু করণীয় আছে?

মোস্তফা আবিদ খান: শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, সার্বিকভাবে আমাদের শুল্কনীতিটা পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আমাদের শুল্কনীতি তৈরিতেই তো গলদ আছে। ক্ষমতাবান গোষ্ঠী নানাভাবে প্রভাবিত করে। অন্যান্য বিষয়ের মতো শুল্কনীতিতেও সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে। আমাদের নীতি হলো যার টাকা আছে, তার স্বার্থ রক্ষা করা, আর যার টাকা নেই, তাকে বঞ্চিত করা। যেমন আমাদের বড় বড় শিল্পের জন্য কর রেয়াত আছে, কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সেই সুবিধা নেই। এটা বৈষম্যমূলক। এর ফলে বড় শিল্পগুলো রেয়াতি দামে কাঁচামাল কিনতে পারেন, কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মালিকদের কিনতে হয় খোলাবাজার থেকে। আমরা অনেক দিন ধরে শুল্ক পুনর্বিবেচনার কথা বলে আসছি। কার্যকর হয়নি। সব সরকারই বলে করব, হবে। কিন্তু এখন প্রয়োজন করে দেখানো।

প্রথম আলো:

বাণিজ্য ও শুল্ক কমিশনের সুপারিশ কি সরকার বাস্তবায়ন করে?

মোস্তফা আবিদ খান: অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয় না। বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। কিন্তু তাদের কাজ তো রাজস্ব আদায় করা। তাদের ওপর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নীতি নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করে না। সমস্যা হলো শুল্ক কমিশনের কাজ নীতি প্রণয়ন আর এনবিআরের কাজ হলো বাস্তবায়ন। দুই সংস্থার মধ্যে যে সমন্বয় থাকা দরকার, সেটাও নেই। শুল্ক কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন, এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা হলো কত বেশি রাজস্ব আদায় করা যায়। আবার যেসব মহল বেশি চাপ দিতে পারে, তাদের দাবি মেনেও নেওয়া হয়। সেখানে নীতি গুরুত্ব পায় না। করনীতির ক্ষেত্রে গোষ্ঠীবিশেষ নয়, গোটা জাতির স্বার্থ দেখা প্রয়োজন।

প্রথম আলো:

ভারত বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিত, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা কি নতুন করে সমস্যা তৈরি করবে না?

মোস্তফা আবিদ খান: বাংলাদেশ থেকে অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে বাইরে বিমানযোগে পণ্য পাঠাতে হয়। আমার জানামতে, বাংলাদেশ থেকে বিমানে পণ্য পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে প্রায় ছয় ডলার, আর ভারত থেকে পাঠালে আড়াই ডলার। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে তারা সহায়তা করে। ২০২০ সাল থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চালু হয়েছিল। এটি প্রত্যাহার করায় খুব বেশি সমস্যা হবে না বলে রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন। আমাদের এখান থেকে বিমানের পরিবহন খরচ কমাতে হবে। অন্যদিকে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বিকল্প পথ হতে পারে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

মোস্তফা আবিদ খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।