বিশেষ সাক্ষাৎকার: মুহাম্মদ নুরুল হুদা

রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি করতে গিয়ে পুলিশের এই দশা

মুহাম্মদ নুরুল হুদা। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্ষমতার পালাবদলের আগে ও পরে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

প্রথম আলো:

৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশ প্রশাসনে একধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিলেও অনেকের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। কেন এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলো?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: বাস্তবতা হলো কর্তৃত্ববাদী সরকার বিদায় নেওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এ কারণে ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশের একটা বড় অংশ কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়ম যখন নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, তখনই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন আইনের অধীনে। কিন্তু তাঁরা যদি আইনের অধীনে না থেকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে কাজ করেন, তখন সমস্যা দেখা দেয়।

বিগত সরকারের আমলে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তঁারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নন, দলের স্বার্থ রক্ষাকারী। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভুদের কাছে পেশাগত দক্ষতা তুলে না ধরে তাঁরা কবে কোথায় ছাত্রলীগ করতেন, সেটা সামনে নিয়ে আসতেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বও এটা প্রশ্রয় দিত। ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার আরেকটি কারণ হলো বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা। পুলিশের মনোবল উদ্ধারে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা সফল হতে কিছুটা সময় লাগবে।

প্রথম আলো:

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব অঘটন ঘটছে, গোয়েন্দা বিভাগ কি সেসব আঁচ করতে পেরেছে বলে মনে করেন?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: এখানেও একই সমস্যা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজ হলো রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা। তাদের চার্টার বা নীতিমালার নিরিখে কাজ করার কথা। কিন্তু সেটা না করে যদি তারা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে সমস্যা তৈরি হয়। হয়েছে। অনেক সময়ই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রাষ্ট্র ও সরকারের বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেন। তঁারা সরকারের স্বার্থকেই রাষ্ট্রের স্বার্থ হিসেবে ধরে নেন।

জনগণের সেবক হিসেবে পুলিশকে তার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। সরকারের স্বার্থে নয়, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থেই পুলিশকে কাজ করতে হবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে ও সচিবালয়ের বাইরে যেসব অঘটন ঘটেছে, সেসব বিষয়ে তো গোয়েন্দাদের আগাম জানার কথা। এ কথা ঠিক যে সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তার প্রতিকার তো চেয়ার দখল করে বা জবরদস্তিমূলকভাবে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করে হতে পারে না। আইনকানুনের মধ্য থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রথম আলো:

গত কয়েক দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা যে অশান্ত হয়ে উঠেছে, তার পেছনে কারণ কী?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ঘটনা থেকে সংঘর্ষ ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বসবাসকারী পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সেটা দূর করতে হবে। কিন্তু কাজটি তো বেসামরিক প্রশাসনকেই করতে হবে। নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনী থাকতে পারে।

বাঙালি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংবেদনশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অভাব-অভিযোগগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক অঘটনের পেছনে বাইরের ইন্ধন আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আর পাহাড়ের মূল সমস্যা যে ভূমির মালিকানা–সংক্রান্ত, তা সরকারকে বুঝতে হবে। ভূমি সমস্যার সমাধান না হলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আসবে না।

মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি রাজনৈতিক। সামরিক অভিযান দিয়ে এর সমাধান করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছে ২৫ বছরের বেশি সময় আগে। এখনো সেখানে স্থানীয় জেলা পরিষদগুলোকে কার্যকর করা যায়নি। এসব নিয়ে পাহাড়িদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

প্রথম আলো:

পুলিশ সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। এর আগেও তো পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবায়ন হলো না কেন?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: সরকার চায়নি বলেই হয়নি। ২০০৭-২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেকগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করেছিল। কিন্তু এসব সংস্কার হলে অনেকের সমস্যা হয়। স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এ কারণেই নির্বাচিত সরকার এসে সেগুলো বাদ দিয়েছে। এটাই হলো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র। যেকোনো সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের মাঠের বাস্তবতা মনে রাখতে হবে। আমি যদি দেশের স্বার্থের চেয়ে দলের, গোষ্ঠীর কিংবা ব্যক্তির স্বার্থকে বড় করে দেখি, কোনো সংস্কারই কাজে লাগবে না।

বাঙালি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংবেদনশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অভাব-অভিযোগগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক অঘটনের পেছনে বাইরের ইন্ধন আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আর পাহাড়ের মূল সমস্যা যে ভূমির মালিকানা–সংক্রান্ত, তা সরকারকে বুঝতে হবে। ভূমি সমস্যার সমাধান না হলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আসবে না। মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি রাজনৈতিক
প্রথম আলো:

পুলিশকে ফের সক্রিয় করা কিংবা তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনা যাবে কীভাবে?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: প্রথমে দেখতে হবে কেন তাঁরা মনোবল হারিয়ে ফেললেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করেছে। এটা যে কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে, তা নয়। অনেক বছর ধরেই এটা চলে আসছে। আবার পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও অনেকে আর্থিক সুবিধার জন্য অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাঁরা প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেছেন। এই মুহূর্তে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দুটি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

জনগণের অভাব-অভিযোগগুলো শোনার জন্য উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করতে পারেন, যেখানে সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ থাকবে। এতে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। দ্বিতীয়ত সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনে যেসব মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন, তঁাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা জানানো দরকার। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা করতে পারে।

পুলিশ বাহিনী তাদের জরুরি সেবা ৯৯৯-কে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে। পুলিশ প্রশাসন যদি জনগণকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারে যে ভবিষ্যতে কেউ তাদের দ্বারা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হবে না, তাহলে তাদের ওপর আস্থা ফিরে আসবে।

প্রথম আলো:

বর্তমানে ঢালাও মামলা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। একটি মামলায় এক শ–দেড় শ আসামি। আবার একই মামলার এফআইআর সংশোধন করে নতুন করে আসামির নাম যুক্ত করা হচ্ছে। এ ধরনের ঢালাও মামলা কি ন্যায়বিচারের সহায়ক হবে বলে মনে করেন?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: এসব মামলা বিভিন্ন মহলের চাপে হচ্ছে। পুলিশের কাজ হবে মামলাগুলোর তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করা এবং যেসব অভিযোগের ভিত্তি নেই, সেগুলো সম্পর্কে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া। আর যেসব মামলা ভিত্তি বা তথ্যপ্রমাণ আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা। মনে রাখতে হবে, আমাদের বিচারিক আইন কিন্তু অভিযুক্তের পক্ষে। অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হলে কেউ শাস্তি পান না।

প্রথম আলো:

গত বুধবার ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মব জাস্টিসে দুজন নিহত হলেন। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজন
আবার মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কীভাবে দেখছেন এই ঘটনা?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: আমি একে মব জাস্টিস বলতে রাজি নই। এটা হলো সংঘবদ্ধ উন্মাদনা। এর সঙ্গে কোনোভাবে জাস্টিস শব্দটি যোগ হতে পারে না। অপ্রিয় সত্য হলো আমাদের সমাজের মধ্যেই এই প্রবণতা আছে। আমরা কোনো কিছু করার চেয়ে প্রতিক্রিয়া বেশি দেখাই। একটি মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে চুরি করেছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তোফাজ্জল নামে যে ছেলেটিকে পিটিয়ে মারা হলো, তার জন্য উন্মত্ততায় অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা যেমন দায়ী, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দায় আছে। এত ঘণ্টা ধরে ছেলেটি মারল, অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিল না। ফজলুল হক হলের কাছেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখানে না নিয়ে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হলো শাহবাগ থানায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও প্রশাসনের মারাত্মক অবহেলা আছে। তারা অভিযুক্তকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখার পর পাহারা বসানো বা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রয়োজন বোধ করল না। জন-উন্মত্ততার সময় প্রশাসন হাত গুটিয়ে থাকলে এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা আরও ঘটবে। আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, সেটা শুরু করতে হবে ব্যক্তি থেকে। এরপর প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র।

প্রথম আলো:

সাম্প্রতিক আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলি করা নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে পুলিশ সীমা লঙ্ঘন করেছে।

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা তো ঘটেছেই। পুলিশের দায়িত্ব মূলত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তারা সেই নিরাপত্তার নামে আরও বেশি মানুষকে নিরাপত্তাহীনতার মুখে ঠেলে দিয়েছে, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেসব পুলিশ সদস্য ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে তারা কী পরিস্থিতিতে গুলি করেছে, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। রংপুরে আবু সাঈদকে যে পুলিশ সদস্য সরাসরি গুলি করেছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশুলিয়ায় ভ্যানভর্তি লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সিরাজগঞ্জে যে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা কিন্তু ছাত্র–জনতার ওপর গুলি ছোড়েননি। বরং তাঁরা জীবন রক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রতিটি ঘটনা দেখতে হবে আলাদাভাবে। সবকিছু এক পাল্লায় মাপার সুযোগ নেই।

প্রথম আলো:

এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায় কতটা?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: পুলিশ প্রবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইজিপি থানার ওসি দূরের কথা, তদন্তের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও নির্দেশ নিতে পারেন না। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে তাঁর বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী প্রতিবেদন দেবেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সেটি পছন্দ না হলে অন্যকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারেন।

কিন্তু কাউকে বলতে পারেন না, এভাবে তদন্ত করো, ওভাবে করা যাবে না। সমস্যা হলো আমাদের ফৌজদারি আইনের অনেক কিছুই কিতাবে লেখা থাকে, বাস্তবে থাকে না। আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে সে ক্ষেত্রে জননিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করা যাবে না। এবারের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

প্রথম আলো:

পুলিশকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন উপদেষ্টা বলেছেন, পুলিশের হাতে এসব স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থাকার কথা নয়।

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: আমার ধারণা, পুলিশকে কী ধরনের অস্ত্র দেওয়া হবে, সেটা একটি কমিটির মাধ্যমে ঠিক হয়। যেখানে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি থাকেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকেন। কারও ইচ্ছা হলেই পুলিশকে এই অস্ত্র দেওয়া যায় না। আমার মনে হয় মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ও এটা জানেন। আর এবার পুলিশ যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেটা প্রথম নয়। কথা হলো যে অস্ত্রই দেওয়া হোক না কেন, তা ব্যবহার বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে।

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে বলে মনে করেন?

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: এ ক্ষেত্রে ইতি-নেতি দুটোই আছে। পুলিশ প্রশাসন প্রায় ভেঙে পড়েছিল, সরকার সেটা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। প্রায় সব সদস্যই কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন। রাস্তার ফুটপাতে যেসব হকার বসেন, তাঁরা বলেছেন, এক পয়সাও ঘুষ দিতে হয় না। রিকশাচালক, সিএনজি অটোরিকশাচালক, গাড়ির চালকেরাও বলেছেন, ঘুষ দিতে হয় না। এসব নিশ্চয়ই ইতিবাচক। কিন্তু এখনো যে বিভিন্ন স্থানে জবরদস্তি তথা জন-উন্মত্ততা চলছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

মুহাম্মদ নুরুল হুদা: আপনাকেও ধন্যবাদ।