সরকারি প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে সব মহলে আলোচনা হচ্ছে। এই দুর্নীতি কি সাম্প্রতিক ঘটনা, নাকি সব সময়ই ছিল? আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
বদিউর রহমান: সরকারি প্রশাসনে দুর্নীতি হঠাৎ করে হয়নি। সব সময়ই কমবেশি ছিল। সংবাদমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেলে কিংবা ক্ষমতার হাতবদল হলে কিছুটা হইচই হয়; কিন্তু তারপর আবার সবকিছু আগের নিয়মে চলতে থাকে। আগে দুর্নীতিবাজদের সমাজ যেভাবে প্রত্যাখ্যান বা অপছন্দ করত, এখন আর সেটি দেখা যাচ্ছে না। এখন দুর্নীতিবাজেরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনেক বেশি ক্ষমতাবান।
এনবিআরের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামও এসেছে। তিনি একটি উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। যে দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, সেই দলের ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। এ নিয়ে তাঁকে কেউ প্রশ্ন করেছেন, শুনিনি।
একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার জনগণের কাছে তো তাঁর জবাবদিহি করার কথা। বরং মতিউর–কাণ্ডের পর কয়েক দিন অনুপস্থিত থেকে ফের অফিসে এলেন। এ সময় তাঁর গাড়ির আশপাশে যাদের দেখলাম, তারা কারা? এখন সরকারি কর্মচারী বলুন আর জনপ্রতিনিধি বলুন, সবাই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। কেউ দুর্নীতি করলে আগে যেভাবে মানুষ তাঁকে অপছন্দ করত, এখন সেটি করে না; বরং টাকা ও ক্ষমতার জোরে সমীহ আদায় করেন। এটাই বড় উদ্বেগের বিষয়।
সরকারি প্রশাসনে দুর্নীতি তো আগেও ছিল। কীভাবে সেটি মোকাবিলা করা হতো।
বদিউর রহমান: আপনি যদি দুর্নীতির সঙ্গে আপস করতে না চান, যত নিচের পর্যায়ে চাকরি করুন না কেন, প্রতিবাদ করা যায়। দুর্নীতিবাজকে শায়েস্তাও করা যায়।
আমি এক ব্যবসায়ী আত্মীয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। তিনি ব্যবসার কাজে এক যুগ্ম সচিবের কাছে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। তিনি একটি কাজে ওই যুগ্ম সচিবকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার পরও ফাইল ছাড়েন না। আরও টাকা চান।
আমি তাঁকে পরামর্শ দিলাম, আপনি এরপর যুগ্ম সচিবের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পকেটে একটি টেপ রেকর্ডার নিয়ে যাবেন। তিনি আমার কথামতো টেপ রেকর্ডার নিয়ে গেলেন। যুগ্ম সচিব তাঁর কাছে আবারও টাকার কথা বললেন। সেটা রেকর্ডও হলো।
এরপরও যুগ্ম সচিব তাঁকে ঘোরাতে থাকলে একদিন সেই রেকর্ড বাজিয়ে শোনান। পরে ওই যুগ্ম সচিব টাকা ফেরত তো দিয়েছেনই, তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আছে বলে মনে হয় না।
আপনি প্রশাসনে চার সেরা সচিবের কথা লিখেছেন আপনার বইয়ে। তাঁরা হলেন কেরামত আলী, সৈয়দ শামীম আহসান, মোহাম্মদ আলী ও আকবর আলি খান। কোথায় তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব, বলবেন কি?
বদিউর রহমান: আমার চাকরিকালে প্রশাসনে নিশ্চয়ই আরও সৎ ও দক্ষ সচিব ছিলেন। আমি এই চারজনের কথা বলেছি। তাঁরা বিভিন্ন সময় ন্যায়ানুগ কাজে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন। এমনকি মন্ত্রীর মুখের ওপর কথা বলতেও দ্বিধা করেননি।
এ প্রসঙ্গে বলতে পারি, আকবর আলি খানের অন্তর্দৃষ্টি ছিল। তিনি যেকোনো ফাইল দেখে এর চুম্বক অংশটি ধরতে পারতেন। একবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি কাজে সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাওয়ার পর জার্মানির মেশিনের বদলে ইতালির মেশিন আনার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
আকবর আলি খান আমাকে বললেন, আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখুন দরপত্র জমা দেওয়ার সময় টাকার বিপরীতে ডয়েস মার্ক ও লিরার বিনিময় হার কত ছিল। অর্থাৎ তিনি যখন দরপত্র দিয়েছিলেন, তখন লিরার দাম বেশি ছিল। ডয়েস মার্কের দাম কম ছিল।
আরেকবার দক্ষিণ কোরিয়ায় সেচ প্রকল্প দেখতে একটি কারিগরি টিম পাঠানো হলো। ওই প্রতিনিধিদলে আমি ছাড়া সবাই ছিলেন টেকনিক্যাল লোক। মন্ত্রীও এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে আকবর আলি খান বললেন, ও ছয় মাস ধরে প্রকল্পের কাজে আছে। ওকে পাঠালে সরকার লাভবান হবে।
সচিব মোহাম্মদ আলী তো একবার সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রীর অসত্য বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ইউ আর লায়ার।’
আমি যখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বদলি হতে চাইলাম সবাই বললেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। এ সময় সৈয়দ শামীম আহসান নিজ উদ্যোগে তাঁর দপ্তরে আমাকে নিয়ে গেলেন।
কেরামত আলী মন্ত্রিপরিষদ সচিব থাকতে ময়মনসিংহে একবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। তিনি ডিসিকে বললেন, রাজনৈতিক টাউট–বাটপারের জন্য তোমরা খাবার পাবে না। আগেভাগে ডিসিকে বলে ব্যবস্থা করো। এখন কি সেটা চিন্তা করা যায়?
সরকারি প্রশাসনের ওপর সব সরকারেরই চাপ থাকে। কীভাবে আপনারা সেই চাপের মুখে কাজ করেছেন?
বদিউর রহমান: ৯৫ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা সেই চাপ উপেক্ষা করতে পারেন না। খুব বেশি হলে ৫ শতাংশ কর্মকর্তা চাপ উপেক্ষা করতে পারেন।
আবার কিছু কর্মকর্তা সেই চাপকে দেখেন সুযোগ হিসেবে। তাঁরা বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য রাজনীতিকদের তোয়াজ করেন। তাঁদের তল্পিবাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ভালো পদ ও বিদেশ সফর বাগিয়ে নেন।
আবার কিছু আমলা গা বাঁচাতে অফিশিয়াল নথিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দোহাই দেন। উপসচিব লেখেন ‘হাউ এভার—যুগ্ম সচিবের অভিপ্রায় অনুযায়ী এটা করার সুপারিশ করা হলো।’ উপসচিব যুগ্ম সচিবের দোহাই দেন। সবশেষে সচিব লেখেন, ‘এটা মন্ত্রী মহোদয়ের অভিপ্রায় অনুযায়ী।’
পুরো আমলাতন্ত্র চলে হাউ এভারের ওপর। প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তা বুদ্ধি ও বিবেক দ্বারা চালিত হন না। ক্ষমতার প্রতাপের কাছে নতিস্বীকার করেন। আবার সৎভাবে নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে গিয়ে অনেক কর্মকর্তাকে নাজেহাল হতেও দেখেছি। তাঁদের পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে।
আপনি ১৯৭৯ সালে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন। এরপর জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমল দেখেছেন। এরশাদের বিদায়ের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমল দেখেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও কয়েক মাস কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলবেন, কোন সরকারের আমলে রাজনৈতিক চাপ বেশি অনুভব করেছেন?
বদিউর রহমান: আপনি যেই সময়ের কথা বললেন, এর মধ্যে জিয়াউর রহমানের আমলে রাজনৈতিক চাপ বা খবরদারি ছিল না। বদলি ও পদোন্নতি নিয়ম অনুযায়ী হতো। একটি ঘটনা বলি।
মোহাম্মদ আলী ছিলেন যুগ্ম সচিব। ইআরডিতে পদায়নের প্রশ্ন এলে অনেকে আপত্তি করলেন। বললেন, উনি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। জিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, অফিসার হিসেবে তিনি সৎ ও দক্ষ কি না। অন্যরা ইতিবাচক উত্তর দিলেন। এরপর জিয়া বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হলে অসুবিধা কোথায়? আমি তো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা চাই ।’
এরশাদের আমলেও প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে তেমন ব্যবহার করা হতো না। তবে ব্যক্তিগত তদবির থাকত। ১৯৮৪ সালের বিসিএসে উম্মে হানিফ নামের এক কর্মকর্তার পুলিশে পদায়ন হয়; কিন্তু ক্ষমতাধর কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাঁকে প্রশাসনে পদায়নের জন্য চাপ আসে। ১১ জন সচিব সুপারিশ করেন।
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এটা রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়; কিন্তু সংস্থাপন থেকে আমরা বললাম, এটা সম্ভব নয়। এটা করতে হলে রুলস অব বিজনেস বদলাতে হবে। পিএসসির সুপারিশ বদলানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই। পরে এরশাদ সেটি মেনে নিয়েছিলেন।
ওই সময়ের আরেকটি ঘটনা। শিক্ষাসচিব ছিলেন কাজী জালালউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে শিক্ষা ক্যাডারে অতিরিক্ত ৩৮৩ জনকে নিয়োগ দিতে চাইলেন। এখানেও আমরা সংস্থাপন থেকে অপারগতা প্রকাশ করলাম। কেননা, চাহিদা ও মেধাতালিকার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এরশাদ আমলে প্রশাসনে কিছু ভালো কাজ হয়েছে। বিশেষ করে এনাম কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনিক সংস্কার।
নব্বইয়ের গণ–আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এরশাদের শাসনের অবসান হলো। জনপ্রশাসনে কোনো পরবির্তন এল কি?
বদিউর রহমান: ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম যে কাজটি করল, তা হলো বিএনপি ঘরানার লোকদের ভালো ভালো পদে বসানো। তারা গণপদোন্নতি দিল এবং এমনভাবে পদোন্নতির নীতিমালা ঠিক করল, যাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা বাদ পড়েন। মন্ত্রী এম কে আনোয়ারের মেয়ের ক্যাডার পরিবর্তন করা হলো, যেটা আইনে নেই।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কী হলো?
বদিউর রহমান: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগেই জনতার মঞ্চ তৈরি হলো। আমি বলব, এটা বুমেরাং হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগের সমর্থক ও বিএনপির সমর্থক আমলারা আলাদা বৈঠক করলেন। প্রশাসনে রাজনীতিকরণ প্রকট হলো। বিএনপি গণপদোন্নতি দিয়েছিল তাদের সমর্থকদের। আওয়ামী লীগ ঘন ঘন পদোন্নতি দিতে থাকল; যাতে তাদের পছন্দের লোকদের ভালো ভালো পদে বসানো যায়।
বিএনপি আমলে যাঁরা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাঁদের চাকরি ফেরত দেওয়া হলো। লাখ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেন তাঁরা।
দুই আমলেই পদায়ন ও পদোন্নতিতে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে সকালে পদায়ন তো বিকেলে বদলির ঘটনাও ঘটেছে। এর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়া ঘুষ–দুর্নীতিরও বড় অভিযোগ ছিল। আবার কোনো কোনো আমলা ছিলেন খুবই চতুর। তাঁরা দুই সরকারকে ম্যানেজ করে চলেছেন।
আপনি বইয়ে লিখেছেন, বিএনপি আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কি?
বদিউর রহমান: আমি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতাম বলেই আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে বিএনপির লোক ও বিএনপির সরকার আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। বিএনপি আমলে আমাকে চারবার পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়। আমার জুনিয়র অনেককে সচিব করা হলেও আমাকে ভারপ্রাপ্ত করে রাখা হয়। এর প্রতিবাদে আমি আট মাস অফিস করিনি। সংস্থাপন সচিবের কাছে চিঠি লিখেছি।
বিএনপির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তো আপনি সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা বলুন।
বদিউর রহমান: ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমি এনবিআরের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে যোগ দিই। প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বৈঠকে আমি যাইনি। কেননা, তখনো আমার নামে ‘ভারপ্রাপ্ত’ তকমা দিয়ে রাখা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই; কিন্তু আমি জুনিয়রদের পেছনে বসতে রাজি হইনি। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আলোচনা হয় এবং নতুন পদে আসীন হই।
এনবিআরে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
বদিউর রহমান: আমি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম বৈঠকে কিছু প্রশাসনিক বদলির সিদ্ধান্ত নিই। এর মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রামের যুগ্ম কমিশনার মতিউর রহমান। তাঁকে রাজশাহীতে বদলি করা হলো; কিন্তু বোর্ডের চারজন সদস্যই বললেন, তাঁকে বদলি করলে রাখতে পারবেন না; কিন্তু আমি সিদ্ধান্তে অনড় থাকলাম।
এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির অফিস আদেশ দিলেন—তাঁদের অনুমতি ছাড়া মতিউরকে চট্টগ্রাম সরানো যাবে না। এটা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। মতিউর তো এনবিআরের কর্মকর্তা ছিলেন। বন্দরের নন। এরপর সিজিএস সিনহা ইবনে জামালীও টেলিফোন করলেন।
সবশেষে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ টেলিফোন করে বললেন, ‘আমি কোনো অনুরোধ করি না কাউকে। আপনাকে একটি অনুরোধ করছি, মতিউর রহমানের বদলিটা বাতিল করা যায় কি না।’
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, তাঁর আগে আমাকে বদলি করুন। তিনি আর কোনো কথা বললেন না। আমি যত দিন এনবিআরের চেয়ারম্যান ছিলাম, তত দিন মতিউরকে রাজশাহীতেই থাকতে হয়েছে। মতিউর আমার অফিস–বাসায়ও ধরনা দিলেন; আমি দেখা করিনি।
মতিউর সম্পর্কে আমি আরও শুনেছিলাম, তিনি আওয়ামী লীগ আমলের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার বেডরুমে যেতেন। বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বেডরুমেও যেতেন। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুতে কবরস্থানে গিয়ে মতিউর কান্নাকাটি করেছেন। পরেও তাঁর ক্ষমতাতোষণের আরও খবর পেয়েছি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন যেসব ছবি আসছে, তা পদাধিকারীদের জন্য স্বস্তিকর নয়।
আপনি তো ২০০৭ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলেন। এরপর প্রশাসনে আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে বইও লিখেছেন। এখনকার প্রশাসন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে না ভালো হয়েছে?
বদিউর রহমান: আবারও গোড়ার কথায় ফিরে আসতে হয়। সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর আসছে, তাতে ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। আগে ব্যক্তি দুর্নীতি করতেন, এখন সেটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
আগে কেউ ঘুষ নিলেও প্রকাশ্যে বলতেন না। লোকলজ্জার ভয় ছিল। এখন ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজেরা সমাজে বুক ফুলিয়ে চলে। ঘুষ নিয়ে কেউ লজ্জা পায় না। মেয়ের বাবারাও ঘুষখোর জামাতা খোঁজেন। আগে ঘুষ–দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেটি শিথিল হয়ে গেছে। ফলে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রসার ঘটছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতীতে যে সামাজিক ঘৃণা বা প্রত্যাখ্যান ছিল, এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিকেরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার কথা বললেও তাঁদের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে তার প্রতিফলন নেই; বরং শতভাগ সমর্থন লক্ষ করা যায়।
এ কারণেই আমাদের দেশে দুর্নীতির দায়ে সাবেক এক রাষ্ট্রপতিকে জেল খাটতে দেখি। সাবেক প্রধান বিচারপতিও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। সব সরকারের আমলে রাজনৈতিক শক্তিও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে।
আবার একশ্রেণির মানুষের মধ্যে এই উপলব্ধি হয়েছে যে অর্থ দিয়ে রাজনীতিকে কেনা যায়। এ কারণেই শহিদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী এমপি পদ পেয়ে যান। দেশে কোনো সমস্যা হয় না। যদিও বিদেশে শহিদকে জেল খাটতে হচ্ছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
বদিউর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।