বিশেষ সাক্ষাৎকার: আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা

রাজধানীকে কম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিতে হবে 

মিয়ানমারের শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, নেপালসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে। প্রায় তিন দশকে এত বড় ভূমিকম্প মিয়ানমারের এই অঞ্চলে সংঘটিত হয়নি। এবারের ভূমিকম্পে জানমালের ক্ষতিও হয়েছে প্রচুর। এই ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য, এ অঞ্চলে নতুন ভূমিকম্পের সম্ভাবনা, সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রস্তুতির অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা

প্রথম আলো:

অনেক প্রাণহানি হলো মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে। এর প্রভাব শুধু মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না, থাইল্যান্ডসহ নানা দেশের ওপর পড়েছে। বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আর ভূমিকম্প নিয়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এবারের ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কিছু বলুন।

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছিল; কিন্তু এবারের এ ভূমিকম্প অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল  ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ একটি অংশ। এই সাবডাকশন জোনের দুটি অংশ আছে। একটি হলো লকড জোন, আরেকটি স্লো-স্লিপ জোন। লকড জোনে যেহেতু সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই সেখানে বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার প্রবণতা বেশি। সাবডাকশন জোনের স্লো-স্লিপ অংশে ‘সাগাইং’ নামের স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্টের কম গভীর অংশ এই ভূমিকম্পের প্রকৃত উৎপত্তিস্থল (১০ কিলোমিটার)।

এটা বাংলাদেশের পূর্বে মিয়ানমারে অবস্থিত। ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের পাঠ ও গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাবডাকটিং প্লেটের তুলনামূলক গভীর অংশ (যেখানে সংঘর্ষজনিত শক্তি বেশি থাকে) সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল হয়ে থাকে। সাবডাকটিং প্লেটের গভীরতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সাবডাকটিং প্লেটের অগভীর অংশ অবস্থিত এবং সেখান থেকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হলে প্লেটের তুলনামমূলক গভীর অংশ পাওয়া যাবে।

আমরা যে অংশে আছি, অর্থাৎ অগভীর অংশে মাঝারি বা তুলনামূলক স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়; কিন্তু মিয়ানমারের এবারকার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সাবডাকটিং প্লেটের গভীরতায় না হলেও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের (সাগাইং ফল্ট) ভূগঠন অঞ্চলের জন্য ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অস্বাভাবিক নয়। তবে ওই অংশে সাবডাকটিং প্লেটের গভীরতায় ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পও সংঘটিত হতে পারে। আর তেমন হলে আমাদের অংশে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। 

ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সুষ্ঠু ভূতাত্ত্বিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রেখে বিপদের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারি
প্রথম আলো:

তাহলে আমরা ভৌগোলিক দিক থেকে যে অবস্থানে আছি, সেখানে ভূমিকম্পের প্রভাব কম পড়বে? 

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: না, এটা মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশের ভূত্বকের যে গঠন, এটি নরম পাললিক শিলা দিয়ে গঠিত। এখানে বিভিন্ন মাত্রার ভূকম্পনের প্রভাব অনুভূত হতে পারে। যদি ছোট বা মাঝারি মাত্রার হাই ফ্রিকোয়েন্সি (দ্রুতলয় কম্পন) ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তবে এই পাললিক শিলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভূমিকম্পের শক্তি ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি উচ্চ মাত্রার লো ফ্রিকোয়েন্সি (ধীরলয় কম্পন) ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তবে পাললিক শিলায় কনস্ট্রাকটিভ ইন্টারফিয়ারেন্সের মাধ্যমে ভূমিকম্পের শক্তিমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ধ্বংসাত্মক রূপ নিতে পারে।

আমাদের ভূ–অভ্যন্তরীণ এই পাললিক শিলার স্তর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জলসম্পৃক্ত থাকে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ভূগর্ভস্থ জলসম্পৃক্ত শিলা তরলীকৃত হয়ে স্তরের দৃঢ়তা লোপ পায়। এতে ভূমিকম্পের অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা ভূগর্ভে দেবে যায়। এটাও ভূমিকম্পের একটা মারাত্মক প্রভাব। 

প্রথম আলো:

একটি বিষয় বেশ অদ্ভুত মনে হচ্ছে, সেটি হলো, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। আর ব্যাংককের দূরত্ব তার চেয়ে অনেকটা দূরে, এক হাজার কিলোমিটারের বেশি; কিন্তু আমরা দেখলাম, ব্যাংককে ব্যাপক প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি হলো। এমনটা কেন? 

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: আমার ব্যাখ্যা হলো, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের পর কিছুটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহের পর নরম পাললিক শিলার প্রভাবে ভূকম্পন ক্রমে দুর্বল হয়ে যায়; কিন্তু উল্টো দিকে অর্থাৎ উৎপত্তিস্থলের পূর্বে থাইল্যান্ডের দিকে ভূগর্ভস্থ গঠন অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলার। ওই স্তর দিয়ে ভূমিকম্পের প্রবাহ দ্রুততর হয় এবং সেখানকার স্থাপনা ও ভূকম্পন ফ্রিকোয়েন্সি সমদশায় নিপতিত হয়ে কনস্ট্রাকটিভ ইন্টারফিয়ারেন্সের মাধ্যমে ভূমিকম্পের মাত্রা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়ে ধ্বংসলীলার ব্যাপকতা বাড়িয়ে দেয়। পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্ত পেলে আমরা হয়তো আরও পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারব। 

প্রথম আলো:

আমরা লক্ষ করছি, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে ছোট-মাঝারি ভূমিকম্প হচ্ছে। এটি এখন বেড়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে ৫৪টি ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে। এসব কিসের ইঙ্গিত দেয়?  

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: প্লেট টেকটোনিক মুভমেন্টজনিত ইন্ডিয়ান প্লেটের সাংঘর্ষিক গতির কারণে উত্তর দিকে এটি ইউরেশিয়ান প্লেট এবং পূর্ব দিকে একই প্লেটের ইন্দো-বার্মা সাবপ্লেটের নিচে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। ভূপৃষ্ঠের টেকটোনিক প্লেটগুলোর এ ধরনের মুভমেন্ট প্রতিনিয়ত এবং বৈশ্বিক। এই টেকটোনিক মুভমেন্ট ভূ–অভ্যন্তরীণ কনভেকশন কারেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে প্লেটগুলোর প্রকৃতি ও প্রান্তীয় বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে প্লেটের গতি-প্রকৃতি ও মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কনভেকশন কারেন্ট সম্পর্কে যদি সহজ করে বলি—আমরা যখন হাঁড়িতে চাল দিয়ে ফুটাতে থাকি, তখন নিচের অংশ আগে উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওপরের শীতল ও ভারী অংশ নিচের দিকে তলিয়ে যায়। এর ফলে হাঁড়ির মধ্যে একটি চক্রাকার পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়।

একইভাবে ভূ–অভ্যন্তরের উত্তপ্ত ও গলিত লাভার কেন্দ্রীয় অংশ বেশি তপ্ত এবং বাইরের অংশ তুলনামূলক শীতল হওয়ায় উত্তপ্ত ও শীতল লাভা পরস্পর বিপরীতমুখী পরিচলনপ্রক্রিয়ায় কয়েকটি চক্রাকার পরিচলন সেলের (কনভেকশন সেল) সৃষ্টি করে। বস্তুত ভূ–অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সেলে একেকটি চক্রাকার পরিচলন স্রোতে (কনভেকশন কারেন্ট) বিদ্যমান। এই কনভেকশন কারেন্টের প্রভাবেই ভূপৃষ্ঠের টেকটোনিক প্লেটগুলো ভিন্ন ভিন্ন গতিমাত্রায় ধাবমান। যেহেতু ভূপৃষ্ঠের আয়তন সীমিত, তাই টেকটোনিক প্লেটগুলো একদিকে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে সংকুচিত হয়ে যায় (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১০০ বছরে প্রায় দেড় মিটার) এবং অন্যদিকে বিপরীতমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে নতুন প্লেটের জন্ম দেয়।

টেকটোনিক প্লেটগুলোর এই গতিশীলতাই মূলত ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার প্রধান কারণ। পারস্পরিক সাংঘর্ষিক বা প্রসারমাণ প্লেটগুলোর প্রান্তের সীমারেখা বরাবর সঞ্চিত স্থিতিশক্তি ও ঘর্ষণশক্তির মিথস্ক্রিয়ায় লকড এবং স্লো-স্লিপ জোন তৈরি হয়। ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানে এই শক্তি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত থাকে, তাকে আমরা লকড জোন বলে থাকি। বাংলাদেশের মধ্যেই সাবডাকশন প্লেটের সীমারেখা অবস্থিত এবং আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখার কাছাকাছি স্থানে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়ে লকড জোন তৈরি করেছে।

ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে এই সঞ্চিত শক্তি সম্পর্কে জানানও দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, এতে কি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রশমিত হচ্ছে? উত্তর হলো, না, তা নয়; বরং এসব ছোট মাত্রার ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অতএব বাংলাদেশের আশপাশে যেসব ৩ বা ৪ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে, সেটি স্বাভাবিক। আর এর ফলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়ছে। যদি ছোট না হয়ে মাঝারি বা কিছুটা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতো, তবে সঞ্চিত শক্তির দ্রুত বিনাশ হয়ে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা কমে যেত।  

প্রথম আলো:

তার মানে হলো আমরা বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কামুক্ত নই। তা–ই যদি হয়, তবে আমাদের তো ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশের সব স্থানে তো এক ধরনের প্রস্তুতি হবে না। আসলে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের?

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য স্থান বলতে মূলত ‘রিং অব ফায়ার’ ও ‘আলপাইন-হিমালয়ান’ অঞ্চলকে বোঝায় এবং বাংলাদেশ ‘আলপাইন-হিমালয়ান’ অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রবণতা ও ঝুঁকি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দুটি ভূগাঠনিক জোনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এগুলো হলো পূর্বাঞ্চলীয় সাবডাকশন জোন ও উত্তরাঞ্চলীয় ডাউকি ফল্ট জোন। এসব স্থানে অনিবার্যভাবে ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। এখন প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে পারি। উভয় ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, পূর্বপ্রস্তুতি। জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প–সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সঠিক নির্মাণস্থান নির্ধারণ করে নির্মাণকৌশল প্রণয়ন করা এবং স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলা।

বাংলাদেশের কোন কোন জায়গায় চ্যুতি বা ফাটল আছে, তা চিহ্নিত করা যায় এবং কিছু করাও আছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য–উপাত্তসহ তালিকা প্রণয়ন এবং ফল্ট-জোন নির্ধারণ করে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের ম্যাপিং থাকা দরকার। যেসব স্থানে চ্যুতি বা ফাটল আছে, সেসব স্থান বড় স্থাপনার জন্য পরিত্যাগ করতে হবে। ভূতাত্ত্বিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে একটি ম্যাপিং দরকার। সেই ম্যাপের ওপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা দেখলাম, ব্যাংককের ৩০ তলা ভবন ধসে পড়ল।

ভূমিকম্প সংঘটিত হলে আমাদের ভূগর্ভস্থ জলসম্পৃক্ত পাললিক শিলাস্তর তরলীকৃত অবস্থায় পর্যবসিত হয়ে বিপুল স্থান দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস ও পাহাড়ধস হতে পারে। সেসব স্থানে ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলোর বিস্তারিত ম্যাপিং করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশন লাইনগুলোর টেকসই উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব পরিষেবায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুর্ঘটনাজনিত ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, দুর্যোগের সময় মানুষের জীবন রক্ষায় করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

তৃতীয়ত, দুর্যোগ–পরবর্তী উদ্ধারকাজ কেমন হবে, এর পরিকল্পনা করা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দ্রুত বর্ধনশীল অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রক্রিয়ায় বিকেন্দ্রীকরণ আনয়ন করতে হবে। যেহেতু রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় নগরগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত এবং নগরের অধিকাংশ  স্থাপনা সঠিক নির্মাণবিধি মেনে নির্মিত হয়নি, বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়ায় নগরগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। বিশেষ করে রাজধানী শহরকে ধীরে ধীরে কম ভূমিকম্পপ্রবণ পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মোটকথা, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সুষ্ঠু ভূতাত্ত্বিক পরিকল্পনা থাকতে হবে, যার মাধ্যমে আমরা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রেখে বিপদের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারি।

প্রথম আলো:

এখন আমাদের প্রস্তুতির যে অবস্থা, সেটিকে কেমন দেখছেন? 

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। কিছু কিছু কাজ হচ্ছে; কিন্তু তা অপ্রতুল। দেখুন, বিপদের অভিজ্ঞতা না থাকলে মানুষের খুব একটা বোধোদয় হয় না। বড় ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। কিন্তু আমরা তো প্রশিক্ষণ, প্রচার, মহড়া ইত্যাদির মাধ্যমে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাস নিয়ে মানুষের কাছে যেতে পারি। যে বাড়িওয়ালা পাঁচতলা বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করে আটতলা ভবন নির্মাণ করেছেন, তিনি কী ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন, সে সম্পর্কে তাঁকে সচেতন করতে পারি। এটা ভীতি সৃষ্টি করা নয়; বরং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এসব কাজ দ্রুতই করতে হবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: আপনাকেও ধন্যবাদ।