আবদুল কাদেরের সাক্ষাৎকার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে অপকর্ম করলে ব্যবস্থা

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বারবার ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে যখন যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল, তখন সাংবাদিকদের কাছে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির তথ্য জানিয়ে আলোচনায় আসেন অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার

প্রথম আলো:

আপনাদের দুজন সমন্বয়ক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হলেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আবদুল কাদের: ছাত্র-জনতা আমাদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারে ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা করছে। সেই জায়গা থেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ছাত্র প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বসম্মতভাবেই নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের সামনের সারির একাধিক সমন্বয়ক সরকার পতনের এক দফার পক্ষে ছিলেন না। আন্দোলনের কারণে পরিচিতি পেলেও ওই সমন্বয়কদের কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। সেই জায়গা থেকে তাঁরা সরকারে থাকতে চাননি।

প্রথম আলো:

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর্যবেক্ষণ কী?

আবদুল কাদের: ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের ইতিবাচক পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এখন সমন্বয়ক টিমের নাম দিয়ে ঘৃণ্য সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ যেমন নিজেদের ব্যানারেই সবকিছু করতে চেয়েছিল, সেই সংস্কৃতিটাই এখন দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিভিন্ন জায়গায় কমিটি করে দিয়ে, যে যাঁর মতো টিম করে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারকে অপব্যবহার করে বিতর্কিত করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, তা আমরা আন্দোলনের মাঠের নেতাদের নেতৃত্বে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।
সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাভোগীরা নামে-বেনামে আমাদের ব্যানার ব্যবহার করে আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, যারা এই কাজগুলো করছে, তাদের অবশ্যই সম্মুখে আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

আপনাদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা আছে?

আবদুল কাদের: আমাদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এত বছর পর রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমাদের (দল গঠনের বিষয়ে) চিন্তাভাবনা আছে। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি, জনগণ কী চায়, জনতা বিষয়টাকে কীভাবে নিচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত দল গঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

আবদুল কাদের: আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলে এসেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রথম প্রত্যাশা হচ্ছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা ঘটানোর পেছনের কারিগর ও মূল ক্রীড়নকদের অতি দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। টার্গেট করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা-ভাঙচুর করা হচ্ছে। অতি দ্রুত সংখ্যালঘু ভাইবোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হবে।

গত ১৫ বছরে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভয়ানক দলীয়করণ করা হয়েছে। আমরা চাই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় কার্যকর করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের সংস্কৃতিকে বিদায় দিয়ে বিচার বিভাগকে মুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ক্ষেত্রে কী চাইছে?

আবদুল কাদের: ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রের অবস্থা ভঙ্গুর। আমরা দেখেছি, যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ। আমরা চাইছি, লঙ্কার যে ব্যবস্থা, সেটাকে পরিবর্তন করতে। এই পরিবর্তনের জন্য যে সময় লাগে, সেই সময়টা দিতে হবে। ব্যবস্থাটা ঠিক করতে হবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমুন্নত করতে হবে। তারপর অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

প্রথম আলো:

ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

আবদুল কাদের: এটা একটা আলাপ-আলোচনার বিষয়। ছাত্র-শিক্ষক ও প্রশাসনের ত্রিমুখী আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি না। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলো সাধারণত নিজ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ও লেজুড়বৃত্তি করে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করার সুযোগ ও সময় তাদের হয় না। এসব সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে বেশির ভাগই অছাত্র। আমরা লেজুড়বৃত্তিক ও দখলদারত্বের ছাত্ররাজনীতি চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নীতিনির্ধারণে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। ক্যাম্পাসে আমরা ছাত্র সংসদভিত্তিক রাজনীতি চাই।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আবদুল কাদের: আপনাকেও ধন্যবাদ।