বিশেষ সাক্ষাৎকার : মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি। ডাকসুর সাবেক ভিপি। ২৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে পার্টির সম্মেলন, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ প্রেক্ষাপটে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন কমিউনিস্ট পার্টি তথা বাম রাজনীতির নীতিকৌশল নিয়ে। আলোচনায় আসে আগামী জাতীয় নির্বাচন, সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও রাফসান গালিব
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বাংলাদেশের বামদের এ দুরবস্থা কেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: বামেরা দুরবস্থায় আছে, এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই দেশই এখন মহা দুরবস্থায় আছে। ফুলের বাগান হয়েছে ক্যাসিনোর বাগান। ব্যবসা-বাণিজ্য সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। বুর্জোয়া শাসকেরাই এটি করেছেন। এখানে সবকিছু পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নীতিনৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটেছে। অর্থনীতির দূষিত হাওয়া রাজনীতি ও সমাজকে গ্রাস করছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: অতীতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে বামেরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন তারা সরব নয়।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এ অভিযোগ সত্য নয়। বাংলাদেশে যত অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, জনজীবনের সমস্যা, তার বিরুদ্ধে একমাত্র বামেরাই নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু সেভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। এর কারণ প্রথমত সরকারের বাধানিষেধ, সামগ্রিকভাবে আমরা একটি শ্বাসরুদ্ধকর ও বৈরী পরিবেশের মধ্যে আছি। তারপরও বামেরা যেসব কর্মসূচি পালন করে, মিডিয়ায় তেমন আসে না। করোনার আগে আমরা যে দেড় হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করেছি, পত্রিকায়-টিভিতে তা কতটা এসেছে? ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সম্মেলনের পক্ষে প্রচারকালে সিপিবির কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ যে হামলা করল, কোনো মিডিয়ায় সে খবর আসেনি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বামেরা ঐক্যের কথা বললেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না কেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ঐক্য হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোট আছে, জোটের বাইরে যেসব বাম দল আছে, তাদের জন্যও আমাদের দরজা খোলা আছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের জোট করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি? অনেকে এখনো সিপিবিকে আওয়ামী লীগের ‘বি টিম’ বলে আখ্যায়িত করে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সিপিবি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঐক্য করবে না। ঐক্য হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ভিত্তিতে। আমরা বাম গণতান্ত্রিক শক্তির জাগরণ চাই। আওয়ামী লীগ তো চার নীতি অনেক আগেই পরিত্যাগ করেছে। তারা গণতন্ত্র ত্যাগ করে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। বিএনপির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আমরা জোটনিরপেক্ষ দেশ ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এখন মৌলিক নীতি-দর্শনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য কোনো পার্থক্য নেই। দুই বুর্জোয়া জোটের বাইরে আমরা বিকল্প বাম শক্তি গড়ে তুলতে চাই।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান সংকট কি গণতন্ত্রের, না অর্থনৈতিক বৈষম্য?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমি বলব সংকট বহুমাত্রিক। নির্দিষ্ট করে বললে সংকটের চারটি রূপ—লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ। লুটপাটতন্ত্র দেশকে গণতন্ত্রহীনতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সম্মেলনের মূল স্লোগান হলো ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো’। লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা ও সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী পরিবর্তন সাধন এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপিকেন্দ্রিক দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: দুঃশাসন হটানো ও ভোটাধিকার রক্ষায় কি আপনারা ক্ষমতার বাইরের সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে ঐক্য করবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: দুঃশাসন হটাও মানে এক দুঃশাসনকে হটিয়ে আরেক দুঃশাসনকে ক্ষমতায় বসানো নয়। এ কারণেই আমরা ব্যবস্থা বদলানোর কথা বলেছি। লুটপাটতন্ত্রের অবসান চেয়েছি। বিএনপি সরকারকে উৎখাত করতে চায় লুটপাটতন্ত্রের ভাগ পায় না বলে। আওয়ামী লীগ আরও বেশি ডানের দিকে যাচ্ছে এ কারণে। অতএব, বিএনপির সঙ্গে আমাদের ঐক্যের কোনো সম্ভাবনা নেই। ভোটের অধিকার রক্ষায় কমিউনিস্ট পার্টি সব সময় সামনের কাতারে ছিল। এরশাদের সময় আমরা স্লোগান দিয়েছি, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কিন্তু এরশাদের আমলে কমিউনিস্ট পার্টি তো আপস করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে গেছে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমরা কোনো আপস করিনি। আমরা নির্বাচনে গিয়েছি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কৌশল হিসেবে। নির্বাচনে আমাদের যাওয়া ভুল ছিল না। ভুল ছিল স্বাধীন ভূমিকা স্পষ্ট করতে না পারার। তখন বিএনপি, আওয়ামী লীগ কেউ আমাদের কথা শোনেনি। আমরা বলেছিলাম অন্তত দুই বছর দলাদলি করবেন না। স্বৈরাচারের মন্ত্রী বা দলের কাউকে দলে নেবেন না।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর কত দিন বঞ্চিত থাকবে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সেটা নির্ভর করবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। আমরা নির্বাচনব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছি। ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া ভোটাধিকার রক্ষা করা যাবে না। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে প্রস্তাব দিয়েছি আনুপাতিক হারে ভোট করার। সেই সঙ্গে কালোটাকা ও পেশিশক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বিএনপিও রাষ্ট্রপতির সংলাপে যায়নি। আপনারাও যাননি। অনেকেই বলেন, আপনারা বিএনপির সঙ্গে এক হয়েছেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এখানে বিএনপির প্রশ্ন আসে কেন? আমরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জানি, রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই। তাঁর সঙ্গে সংলাপে বসেও কোনো লাভ হবে না। তিনি কারও নাম চূড়ান্ত করতে পারবেন না। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিত সরকার যে আইন করেছে, সেটি প্রতারণামূলক।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আপনারা যেসব নীতি ও কর্মসূচি নিতে যাচ্ছেন, তা বৃহত্তর জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার উপায় কী?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আরও কার্যকরভাবে, দক্ষতার সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: অভিযোগ আছে, আপনারা ভোটের রাজনীতি করেন, অথচ ভোটারের কাছে যান না।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এ অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। আমরা ভোটারদের কাছে যখনই গিয়েছি, আমাদের কর্মসূচি প্রচার করেছি, বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মিছিলে হামলা হয়েছে। একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনেও আমাদের প্রার্থীদের প্রচার চালাতে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থার উত্তরণে নির্বাচন ও গণজাগরণকে আলাদা করে দেখলে হবে না। আমরা সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যেই নির্বাচনকে হাতিয়ার হিসেবে নিতে চাই। সেটি নির্বাচনের মাধ্যমেও হতে পারে, অন্য পথেও হতে পারে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আমরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সেটি ছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। এখন কার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এখনকার লড়াই হবে ১ শতাংশের বিরুদ্ধে ৯৯ শতাংশের, যে ১ শতাংশ দেশের সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: একসময় আপনারা বলতেন, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কোনো কর্মসূচি হতে পারে, যদি তারা জামায়াতকে ছাড়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির স্বার্থে হেফাজতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে। এ দুই বিষয়কে কীভাবে দেখেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমাদের ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্যের কথা আমরা বলিনি। কথা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চার নীতির বাইরে বা বিপরীতে কোনো রাজনৈতিক বা জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি যাবে না। কিন্তু আমরা অনুরোধ করেছি, আপনারা জামায়াতের সঙ্গে থেকে খাল কেটে কুমির আনবেন না, বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য হেফাজতকে লালন করবেন না।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ২০১৮ সালে আপনারা নির্বাচন বর্জন করেছেন কিন্তু নির্বাচন তো হয়ে গেছে। ২০২৩ সালেও কি একই পরিস্থিতি হবে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সেটি এখন অগ্রিম কীভাবে বলব। আমাদের কৌশল হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম আরও জোরদার করা। পেশিশক্তি, আর্থিক প্রভাব, প্রশাসনিক কারসাজি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করা আমাদের দাবি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কি আপনারা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি বলে মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: অবশ্যই এটি হুমকির বিষয়। আমরা এটির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বাম গণতান্ত্রিক জোটে যে মতাদর্শগত বিরোধ, তা দূর করতে কী করছেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: মৌলিক জায়গায় কোনো ধরনের বিরোধ নেই। ভেতরে অনেক ধরনের কথাবার্তা হয় কিন্তু বাম জোট তার যে ঘোষণা, দুই জোটের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলে বিকল্প সরকার গড়ে তুলতে হবে, সেখানে অবিচল আছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: অতীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বড় বড় কিছু ভুলের কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন পার্টি ভাগাভাগি হলো, কেন্দ্রীয় কমিটির দুই–তৃতীয়াংশ সদস্য চলে গেল, এমনকি একসময় আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপকেও আপনারা সমর্থন করেছিলেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমাদের প্রচুর সাফল্য আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। সঙ্গে কতগুলো গুরুতর ভুলও ছিল, যার ফলে পার্টির নেতৃত্বের বড় একটি অংশ বলল যে কমিউনিস্ট পার্টির আর দরকার নেই। তারা প্রথমে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে রূপান্তরের নাম করে বাস্তবে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ গণফোরামে চলে গেলেন। এটি পার্টির ওপর বড় একটি আঘাত ছিল। তবে সেই অবস্থা থেকে আমরা পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কমিউনিস্ট পার্টি একসময় নিজের অস্তিত্ব বিলোপ করে বাকশালে যোগ দিয়েছিল আবার ’৭৫–এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: কমিউনিস্ট পার্টি কখনোই তার অস্তিত্ব বিলোপ করেনি। এটি নিয়ে মিথ্যাচার চালানো হয়। বাকশালের কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার পর সেটিকে আন্ডারগ্রাউন্ডে একেবারে গোপন অবস্থায় নিয়ে গিয়ে সংকুচিত আকারে তার কাঠামোটা করেছিলাম। যেভাবে বাকশাল হয়েছিল, সেটি সঠিক ছিল বলে আমি মনে করি না। এটিও আমি জানিয়ে দিতে চাই, বাকশাল গঠনের কথাবার্তা যখন চলছে, পার্টির নেতৃত্ব কমরেড মণি সিংহ, কমরেড ফরহাদ গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, এটি যেন না করেন। তাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, সেটি বঙ্গবন্ধু নিজেই আমাকে বলেছিলেন। তবে জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে বলব আমাদের গুরুতর ভুল হয়েছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নীতির প্রভাব এখানে কেমন পড়বে বলে মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: ভারতে একটি হিন্দুত্ববাদী শক্তি ক্ষমতায় আছে এবং তারা চায় বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িকতা তৈরি হোক। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার কার্ড নিয়ে খেলা আরও জোরদার হবে। তলেতলে হিন্দু বা মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা একজোট হয়ে সমাজটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চায়। যদিও বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, একে অপরের বিরোধিতা করছে। ফলে রাজনৈতিকভাবে এটি আমাদের জন্য বিপজ্জনক।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বিশ্বব্যাপী বামদের এখন ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। আপনারা কীভাবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: বামদের অবস্থা ক্ষয়িষ্ণু বলে যারা বলে থাকে, তারা বিশ্বের খবর রাখে না। পুরো লাতিন আমেরিকা এখন বামপন্থীদের দখলে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে প্রগতিশীল সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। ইউরোপে এমনকি খোদ আমেরিকার ভেতরে বড় বড় আন্দোলন হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে সম্প্রসারণবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ, পুঁজিবাদ আরও বেশি মাত্রায় প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের স্বার্থকে কতটা ক্ষুণ্ন করতে পারে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সেটি নির্ভর করে আমাদের দেশে কী ধরনের সরকার আছে তার ওপর। সরকার যদি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তিকে সন্তুষ্ট করাটাকে ক্ষমতায় থাকার প্রধান উপজীব্য হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশের সম্পদ দখল করে রেখেছে। দুঃখজনক হলো ইসরায়েলও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আমাদের সব গোপন তথ্য পেগাসাসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া আছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সামরিক চুক্তির বিষয়টা তো আছেই। মুক্তিযুদ্ধের আগে এসব কি আমরা কল্পনা করেছিলাম?
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আপনাদেরও ধন্যবাদ।